ধনী বন্ধুকে বিরিয়ানি-মদ খাইয়ে গলা কেটে খুন! বোলপুর ছাত্রহত্যা-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ধনী বন্ধুকে বিরিয়ানি-মদ খাইয়ে গলা কেটে খুন! বোলপুর ছাত্রহত্যা-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য

বোলপুর:  বীরভূমে ছাত্র খুনে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ বন্ধুর হাতেই খুন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পড়ুয়া সৈয়দ সালাউদ্দিন ওরফে জয়। রবিবার সকালে চৌপাহাড়ির জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় বীরভূমের খয়রাশোলের পাথর ব্যবসায়ীর পুত্র সৈয়দের নলি কাটা দেহ৷ দেনার দায়ে বড়লোক বন্ধুকে খুন করে শেখ সলমন। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই জানিয়েছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। ইতিমধ্যেই সলমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷

আরও পড়ুন- সাড়ে ১৪ ঘণ্টার ম্যারাথন তল্লাশি শেষে আমির খানের বাড়ি থেকে উদ্ধার ১৭.৩২ কোটি!

মৃত ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রের মা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ জয়ের মোবাইল থেকে একটি ফোন আসে তাঁদের কাছে। কিন্তু ফোনের ওপারে ছেলে ছিল না৷ বরং শোনা যায় অন্য একটি গলা৷ তিনি বলেন, ‘‘ফোন ধরার পরেই ওপার থেকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি কে? জয়ের বাবা?’ হ্যাঁ বলতেই বলা হয়, আপনার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ লাগবে। আমরা সেই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলাম। বলেছিলাম, ছেলের যেন কোনও ক্ষতি না হয়৷ এর পরই থানায় ডায়েরি করি।’’ জয়ের বাবা সৈয়দ আব্দুল মতিনের দাবি, চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে ছেলেকে।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বীরভূমের পুলিশ সুপার জানান, পাথর ব্যবসায়ী সৈয়দ আব্দুল মতিনের ছেলে সৈয়দ সালাউদ্দিনকে অপহরণ করার পর ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করা হয়। টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয় অপহরণকারী। এই হুমকি ফোনে পেয়েই মল্লারপুর থানায় যান ওই পাথর ব্যবসায়ী। ঘটনার তদন্তে নেমে অপহৃতের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন খুঁজে বার করে পুলিশ৷ ওই ছাত্রের শেষ টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় চোপাহাড়ি জঙ্গলে। টাওয়ার লোকেশনের ভিত্তিতেই পুলিশের তিনটি দল পৌঁছে যায় ওই এলাকায়৷ খোঁজ শুরু করে তারা৷ রবিবার  সকালে উদ্ধার হয় জয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ।

 
পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার তদন্তে নেমে সলমন নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। সে মৃত ছাত্র জয়ের বন্ধু। জেরার মুখে প্রথমে সলমন জানায়, সে-ই সৈয়দ সালাউদ্দিনকে ডেকে এনেছিল। কিন্তু তার বন্ধুকে খুন করেছে অন্য তিন জন ব্যক্তি৷ প্রমাণ স্বরূপ নিজের হাতের চোটও দেখায় সে। কিন্তু, তাঁর কথায় একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে৷ পরে চাপের মুখে স্বীকার করে, সে-ই খুন করেছে জয়কে। কিন্তু খুনের কারণ কী? কী ভাবেই বা খুন? 

সলমন জানায়, বাজারে তাঁর অনেক দেনা হয়ে গিয়েছিল। দেনা থেকে মুক্তি পেতে বড়লোক বন্ধুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ছক কষে। শনিবার রাতে ফোন করে বন্ধুকে ডেকে আনে। প্রথমে তারা একটি চায়ের দোকানে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়৷ এর পর প্রান্তিক এলাকায় একটি দোকানে একসঙ্গে বসে বিরিয়ানিও খান৷ এর পর একটি মদের দোকান থেকে বিয়ার এবং মদের বোতল কিনে সোজা চলে যায় চৌপাহাড়ির জঙ্গলে।

পুলিশের দাবি, সালাউদ্দিন ওরফে জয়কে অতিরিক্ত মদ খাওয়ায় সলমন৷ যার জেরে বমি করতে করতে অচৈতন্য হয়ে পড়েন তিনি৷ সেই সুযোগে তাঁর মোবাইল ফোন বার করে জয়ের বাড়িতে ফোন করে সলমন। বন্ধুর বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ চায়। জয়ের বাবার দাবি, রাত সাড়ে ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত মোট সাত বার তাঁকে ফোন করা হয়৷ 

তবে অপহরণের সঙ্গে সঙ্গে যে খুনের ছকও কষে রেখেছিল সলমন, তা স্পষ্ট৷ নিজের কাছে একটি চাকু লুকিয়ে রেখেছিল সে৷ সেটা দিয়েই বন্ধু জয়ের গলা কেটে খুন করে৷ যদিও ছেলে এমন কাজ করতে পারে তা মানতে নারাজ সলমনের মা পাপিয়া বিবি৷