আলিপুর: মাটির মেঝে, মাথায় টিনের ছাউনি৷ বাঁশের বেড়া ঘেরা ছোট্ট ঘরেই বেড়ে ওঠা তাঁর৷ টিনের চালে ছিল বেশ কিছু ফুটো৷ ফলে বর্ষার মরশুমে ঘর ভরত বৃষ্টির জলে৷ টুপ-টাপ শব্দের মধ্যেই মন দিয়ে বইয়ের পাতায় চোখ বোলাত ছোট্ট ছেলাটা৷ তিনি যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, তখন একটা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল জুটেছিল। তার আগে পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দূরে পায়ে হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করতেন তিনি। এমনই এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (ইউপিএসসি) আইএসএস বা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় গোটা দেশে দ্বিতীয় হলেন আলিপুরদুয়ারের বাপ্পা সাহা। বাপ্পার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা আলিপুরদুয়ার৷
আরও পড়ুন- তাঁদের হয়ে আইনি লড়াই লড়েছেন, বিকাশের বাড়ির বাইরেই বিক্ষোভ চাকরিপ্রার্থীদের
আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া দক্ষিণ মাঝেরডাবরির বাসিন্দা বাপ্পা। বাবা গোপাল সাহা পেশায় রাজমিস্ত্রি৷ মা লক্ষ্মী সাহা গৃহবধূ৷ বাড়িতে বাবা-মা ছাড়াও আছেন দিদি বর্ণালি সাহা। ছোট থেকেই মেধাবী বাপ্পা। ছোটবেলায় আলিপুরদুয়ারের দুর্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি৷ পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন গোবিন্দ হাই স্কুলে। সেখান থেকেই মাধ্যমিকে ৯১শতাংশ এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৯৪.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়পাশ করেন। স্কুলের পাঠ শেষ করে ভর্তি হন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ স্নাতকে (বিএসসি) গোল্ড মেডেল পান তিনি।
বাপ্পা জানান, স্নাতক স্তরে ভর্তির পরেই স্ট্যাটিস্টিক্স বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। ছোট থেকেই তিনি অঙ্কে তুখোর৷ তাই স্নাতকোত্তরে (এমএসসি) এগ্রিকালচার স্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন৷ সেই মতো ভর্তি হন দিল্লির এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে৷ স্নাতকোত্তরে ভর্তির পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের কাছ থেকে আইএসএস পরীক্ষার কথা জানতে পারেন বাপ্পা। ব্যাস! শুরু করে দেন প্রস্তুতি৷
বাপ্পা বলেন, “বাবা সামান্য রাজমিস্ত্রির কাজ করেন৷ ফলে ছোটবেলা থেকেই খুব একটা বেশি বইপত্র কিনে দিতে পারেননি। তবে শিক্ষকরা সব সময় পাশে থেকেছেন৷ সাহায্য করেছেন। অনেকে বিনা পয়সায় টিউশনও পড়িয়েছেন। এমনকি বই-পত্রও কিনে দিয়েছেন। এগ্রিকালচারে বিএসসি করার সময় স্কলারশিপ পাই। তা দিয়েই এমএসসি-র পাশাপাশি আইএসএস পরীক্ষারও প্রস্তুতি নিই।”
বাপ্পার মা লক্ষ্মীদেবী জানান, জমি বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে দুটো পাকা ঘর তুলেছেন তাঁরা৷ তবে ছোট বেলায় বেড়ার ঘরেই খুব কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছেন তিনি৷ এমনও দিন গিয়েছে যখন শুধুমাত্র ডাল-ভাত খেয়ে পায়ে হেঁটে ছেলে স্কুলে গিয়েছে। টিফিনের টাকাটাও দিতে পারেননি। কিন্তু পড়াশোনায় একদিনের জন্যেও গাফিলতি করেননি বাপ্পা। বাবা গোপাল সাহার কথায়, “ছেলে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে৷ আজ ওর সাফল্য আমার বুক চওড়া করে দেয়।” গোবিন্দ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজীব দাস বলেন, “মেধা ও পরিশ্রমের কাছে অর্থ যে কোনও বাধা নয়, সেটাই দেখিয়ে দিলেন বাপ্পা।”
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>