রাজ-কেন্দ্রে বিদ্রোহ, প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই ‘গৃহযুদ্ধ’ ঘাসফুলের অন্দরে, দলত্যাগের হুঙ্কার

রাজ-কেন্দ্রে বিদ্রোহ, প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই ‘গৃহযুদ্ধ’ ঘাসফুলের অন্দরে, দলত্যাগের হুঙ্কার

7417cd9f7ed80f52d1e0f74ef1d48db1

কলকাতা:  তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দলের অন্দরে৷ টিকিট না পেয়ে দলত্যাগের পথে প্রাক্তন হেভিওয়েটরা৷ ইতিমধ্যেই শিবপুরের প্রাক্তন বিধায়ক জটু লাহিড়ি বিজেপি’তে যোগদান করেছেন বলে দাবি৷ প্রার্থীপদ না পাওয়ায় অসম্মানিত হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷ তবে জটু লাহিড়ির বিজেপি যোগের খবর তাঁ কাছে নেই বলেই পাল্টা দাবি করেছেন বিজেপি জেলা সভাপতির৷ 

আরও পড়ুন-  এবার জনতার দুয়ারে কমিশনে! প্রথম দফার ভোটে বাংলায় বিপুল বাহিনী!

এদিন ক্ষোভ উগড়ে জটুবাবু বলেন, ‘‘এই দলে কোনও নেতা নেই৷ এখানে একজনই সব৷ উনি যা বলেন তাই হয়৷ এ এক অদ্ভূত রাজত্ব৷ আমাকে যদি কোনও পদ নাও দেওয়া হয়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিজেপি করব৷ কোনও দিনও অপমান সহ্য করব না৷’’ আগামীকাল নরেন্দ্র মোদীর সমাবেশেও তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন৷

  
এদিকে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই বিজেপি’তে বিক্ষোভ৷ মনিরুল ইসলামকে প্রার্থী না করার দাবি জানিয়ে লাভপুরের পার্টি অফিসে পড়ল পোস্টার৷ যেখানে লেখা রয়েছে, খুনি মনিরুল হটাও বিজেপি বাঁচাও৷ মনিরুল মুক্ত লাভপুর চাই বলে বিজেপি’র সাধারণ কর্মীবৃন্দের নামে পোস্টার লাগানো হয়েছে৷   ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন মনিরুল৷ পরে তিনি বিজেপি’তে যোগ দেন৷ 

গতকাল তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাঁকুড়ার সোনামুখীর প্রাক্তন বিধায়ক দীপালি সাহা৷ ২০১১ সালে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন তিনি৷ তবে ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রেই পরাজিত হন৷ এবার সোনামুখী কেন্দ্রে লড়ছেন দলের জেলা সভাপতি শ্যালম সাঁতরা৷ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরই ক্ষোভের সুর দাপীলির গলায়৷ তিনি বলেন, ‘‘দিদির দলে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে৷ তাই বাইরে থেকে সোনামুখীতে প্রার্থী আনা হচ্ছে৷ সোনামুখীর মানুষ এর জবাব দেবে৷ টাকা পয়সা নিয়ে পিকে’র টিম প্রার্থী ঠিক করেছে৷’’ এদিকে দলের জেলা সভাপতি তথা তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘কী হয়েছে খোঁজ খবর নেওয়া হবে৷’’ 

এদিকে শিবপুর কেন্দ্রে মনোজ তিওয়ারিকে প্রার্থী করা নিয়েও চড়ছে উত্তেজনার পারদ৷ শনিবার দুপুরে দাসপুরে বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূল কর্মীরা৷ মনোজ তিওয়ারিকে বহিরাগত দাবি তাঁদের৷ মনোজের বদলে ভূমিপুত্র হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরাকে প্রার্থী করতে হবে বলে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের দাবি৷ 

আবার বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রে বনগাঁ পুরসভার প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে প্রার্থী করার দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল কর্মীরা৷ যশোর রোডে চলল তৃণমূল কর্মীদের অবরোধ৷ টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাল তারা৷ এর আগে তাঁর সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচার শুরু হয়েছিল৷ 

তারকা প্রার্থী নিয়েও ক্ষোভ তৃণমূলের অন্দরে৷ বিধানসভা ভোট বারাকপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছে রাজ চক্রবর্তী৷ তাঁকে বহিরাগত দাবি করে ক্ষোভ উগড়ে দিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা৷ তাঁদের কথায়, ‘চুন খেয়ে মুখ পুড়েছে বলে রাজ চক্রবর্তীকে দেখে ভয় পাচ্ছে দলীয় কর্মীরা৷ ক্ষোভ নিয়ে প্রতিক্রিয়া বারাকপুর পুরসভার প্রশাসক উত্তম দাসের কথায়, ‘‘আমি রাজ চক্রবর্তীকে চিনি না৷ উনি সিনেমা জগতের লোক৷ আমি সিনেমা দেখি না৷ গত দশ বছর ধরে আমাদের যে সাংসদ, বিধায়ক ছিলেন তাঁরা বহিরাগত। তাঁরা দলের সঙ্গে বেইমানি করে চলে গিয়েছেন। সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। চুন খেয়ে মুখ পুড়েছে, তাই দই দেখে ভয় করছে।’’ এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, প্রার্থী নির্বাচন করেছে দলের শীর্ষ নেতৃ্ত্ব৷ দুই-একটি জায়গায় ক্ষোভ রয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে নেওয়া হবে৷  

আরও পড়ুন- টিকিট না পেয়ে বিজেপি’তে সোনালী? আজ রাতেই হবে ফয়সলা

এ প্রসঙ্গে রাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বারাকপুরে আমাদের যে দলীয় কর্মীরা রয়েছেন, আগামীকাল আমি নিজে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলব৷ শীর্ষ নেতৃ্ত্ব নিশ্চয় কিছু ভেবেই আমাকে বারাকপুরের প্রার্থী করেছে৷ আশা করি স্থানীয় নেতা কর্মীদের কাজ করতে কোনও অসুবিধা হবে না৷ সবাই মিলে বারাকপুরের উন্নয়ন করব৷ আমরাই জিতব৷ 

অন্যদিকে, এদিন সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করলেন আরাবুল ইসলাম৷ পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে করলেন বৈঠক৷ প্রসঙ্গত, তাঁকে সরিয়ে এবার ভাঙরের প্রার্থী হয়েছেন মহম্মদ রেজাউর করিম৷  
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *