অভিষেক-বৈঠকও কি কোনও রাজনীতি? একাধিক প্রশ্ন তুলল ‘যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ’

অভিষেক-বৈঠকও কি কোনও রাজনীতি? একাধিক প্রশ্ন তুলল ‘যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ’

কলকাতা: এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। কিন্তু এই বৈঠক নিয়ে খুশি নয় আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে টেট উত্তীর্ণরা, এসএসএসি গ্রুপ সি, ডি-র প্রার্থীরা। এবার বড় প্রশ্ন তুলে দিল ‘যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ’।

আরও পড়ুন: অভিষেকের অফিসের সামনে রাতভর অবস্থানে ছিল টেট-উত্তীর্ণরা, সকালে সরাল পুলিশ

মঞ্চের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, একটা নাটকীয় পর্ব শুরু হয়েছে। ঠিক নাটক নয় একটা প্রহসন। অথবা বলা চলে ধান্দাবাজি। কলকাতার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে নবম থেকে দ্বাদশ স্তরের চাকরিপ্রার্থীরা। এই চাকরি প্রার্থীরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। একটা অংশ যাদের কোনও ব্যানার নেই। অন্য অংশ যারা ব্যানার যুক্ত এবং ব্র্যান্ডেড, নাম ‘যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ’। কিন্তু কেন এই বিভাজন? তার ব্যাখ্যা দিয়েছে তাঁরা। বক্তব্য, কলকাতার মেয়ো রোড প্রেস ক্লাবের সামনে ২৯ দিনব্যাপী যে অনশন আন্দোলন হয়েছিল সেই অনশন আন্দোলন চালিয়েছিল যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ। বর্তমানে যারা ব্যানারবিহীন আন্দোলন চালাচ্ছে তারা বাড়িতে বসে ছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, তারা ওয়েটিং লিস্টের শেষের দিকে অবস্থিত, তাই তাদের চাকরি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। দুর্নীতির প্রশ্ন কেউ তারা বড় করে দেখেনি। কিন্তু যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ তথা অনশনকারীরা মন্ত্রীর মেয়ের দুর্নীতি থেকে গেজেট না মানা, বেশ কয়েক দফা দাবিকে সামনে রেখে আমরণ আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিল। এই মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত হয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই মঞ্চ থেকে পাঁচ সদস্যের একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছিল আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে নিয়ে।

আরও পড়ুন- SSC-দুর্নীতিতে কোটি কোটি ‘কালো টাকা’ কোথা থেকে এল? কেন্দ্রের কাছে জবাব তলব অভিষেকের

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে সেই ৫ সদস্যের কমিটি ও তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের অবৈধভাবে নিয়োগ করেছে সরকার! পাশাপাশি এখন বেরিয়ে এসেছে অজস্র দুর্নীতির ঘটনা। মেরিট প্যানেলে নাম না থাকা ক্যান্ডিডেটদেরকেও নিয়োগ করে দেওয়া হয়েছে অবৈধভাবে, বলে দাবি। ফলে যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ পুনরায় হাইকোর্টের কাছে আবেদন করে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান চালানোর আর্জি জানিয়ে। তাদের এই খবর শুনে পাশের নামহীন মঞ্চ রি-পিটিশন করে। যদিও তাদের আবেদন ছিল সল্টলেকে বসার। কিন্তু তাঁরা গান্ধী মূর্তিতে বসছে জেনে উকিলের সহযোগিতায় তারাও গান্ধী মূর্তির পারমিশন বের করে। দাবি তোলা হচ্ছে এমনই। একসঙ্গে আন্দোলনের আবেদন জানানোর সত্ত্বেও তারা রাজি হয়নি। গান্ধী মূর্তিতে তারা আসে যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের একদিন পরে। একসঙ্গে আন্দোলনের আবেদনে সাড়া না দিয়েও মিডিয়ার সামনে তারা বারবার নিজেদেরকে অনশনকারী বলার চেষ্টা করে। যদিও যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ বলছে, ১০০ শতাংশ নিশ্চিত তাঁরা আন্দোলনে ছিল না এমনকি যে কোনও সময় তাঁরা প্রমাণ দিতে রাজি। তাহলে এর নেপথ্যে উদ্দেশ্য কী?

যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ চেয়েছিল আর কোনও গোপন মিটিং, কোনও গোপন সাক্ষাত নয়। নেতা-নেত্রীরা যা কিছু বলবে প্রকাশ্য মঞ্চে এসে বলুক। কিন্তু অনশন আন্দোলনের পাঁচ কমিটির সেটিং এর সেই পুরনো খেলা চলছিল ওই মঞ্চের অ-অনশনকারী কয়েকজন নেতার মধ্যে। তাই তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিরোধী যেমন ছিল, তেমনই ছিল গোপন মিটিং এর পক্ষে। এখানেই একাধিক প্রশ্ন তুলছে এই মঞ্চ। এক, ৫০০ দিন যাবৎ চলতে থাকা একটা আন্দোলন, ৫ বছর ধরে রোদ বৃষ্টি জলকে উপেক্ষা করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে চাকরিপ্রার্থীরা। ৫ ঘন্টা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে। তাহলে ৫ মিনিটের জন্য সরকারপক্ষ জনসম্মুখে এসে কথা বলতে পারবে না? দুই, তাদের কি কোনও অধিকার নেই সরকার পক্ষের কথা সরাসরি শোনার? তিন, কেন গোপন মিটিং এর প্রয়োজন হল?  এই রকমই গোপন মিটিং আগে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়নি কি? নাকি এই গোপন মিটিং আসলেই দুর্নীতি ঢাকার রণকৌশল এবং নেতাদের কিনে নেওয়ার অন্য ষড়যন্ত্র? চার, আগেও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী অনশনকারীদের মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চয়ই তাঁর থেকে বড় নেতা নয়? তাহলে তিনি কেন জনসম্মুখে এসে সামগ্রিক বিষয়টা বলতে পারছেন না?

আরও পড়ুন- ‘মেয়ের কর্মফল ভুগতে হবে…’, আক্ষেপের সুর অর্পিতার মায়ের গলায়

এই মঞ্চ স্পষ্ট দাবি করছে, দুর্নীতি আজ অভিযোগ নয় প্রমাণিত। তাহলে দফায় দফায় এত গোপন মিটিং, তাও আবার সমস্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নয়, শুধুমাত্র কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে কীসের প্রয়োজন তা তাঁরা জানতে চায়। তাঁরা এও জানাচ্ছে, আগেও বহুবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বহু নেতার দরবারে দরবারে তারা ঘুরেছে, কেউ সাক্ষাৎ করেননি। তাহলে আজ হঠাৎ এত মানবিক হয়ে কয়েক জন নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করার সিদ্ধান্ত কীসের ইঙ্গিত? প্রশ্ন তাঁদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + eleven =