ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে গড়লেন আস্ত একটা গাড়ি, অবাক করলেন নদিয়ার সঞ্জয়

ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে গড়লেন আস্ত একটা গাড়ি, অবাক করলেন নদিয়ার সঞ্জয়

eab05075787f904de417b1dd34d3a42f

কলকাতা:  একটা স্বপ্ন৷ আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি৷ যা অসম্ভবকেও করে তুলল সম্ভব৷ না, তাঁর কাছে কোনও ডিগ্রি নেই৷ নেই কোনও প্রথাগত শিক্ষা৷ স্বপ্ন পূরণের সম্বল বলতে কিছু পুরনো ভাঙাচোরা জিনিস আর ১০ হাজার টাকা৷ আর তা দিয়েই আস্ত একখানি গাড়ি বানিয়ে ফেললেন নদীয়ার সঞ্জয় প্রামাণিক৷ 

আরও পড়ুন- মমতাকে গণতান্ত্রিক পথে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব, সৌজন্য ছেড়ে সংঘাতের পথে শুভেন্দু

গাড়ি চড়ার সাধ বা স্বপ্ন তো অনেকেরই থাকে৷ কিন্তু ক’জন তা পূরণ করতে পারে? ঝাঁ চকচকে শোরুম থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে গাড়ি কেনার সাধ্য মধ্যবিত্তের কই! তবে এখানে স্বপ্ন পূরণের দাম লাখ টাকা নয়, মাত্র দশ হাজার টাকা। শান্তিপুরের বৈষ্ণব পাড়ার সঞ্জয় সেই স্বপ্ন পূরণের জাদুকর।

car

সঞ্জয়বাবু কোনও ইঞ্জিনিয়ার নন৷ পেশায় মণ্ডপ সজ্জার শ্রমিক। তবে তাঁর কারিগরি বিদ্যা অনেকের দক্ষতাকেই হার মানায়৷  লকডাউনের সময় ঘরে বসে বাতিল হওয়া বিভিন্ন দ্রব্য, ভাংড়ি গোলার পরিত্যক্ত  জিনিস দিয়ে ছোট ভাইপোর বায়না সামলাতে বানিয়ে ফেলেছিলেন আস্ত একটি গাড়ি। সেই গাড়ির নাম দিয়েছিলেন ‘আমি একা’। সেই গাড়িতে বসার আসনও ছিল এক৷ সম্প্রতি তারই একটি ভেরিয়েশন অবিষ্কার করেছেন সঞ্জয়৷ সেই গাড়িতে চালকের পাশে বসতে পারবেন, আরও একজন৷ যদিও সঞ্জন এখনও অবিবাহিত৷ তাঁর পাশের আসনে বসার মানুষকে খুঁজে পাননি এখনও৷ 

সঞ্জয়ের তৈরি নতুন গাড়িটি আরও অভিনব এবং আকর্ষণীয়। তবে গাড়ির দরজা থেকে সিলিং, চাকা, ব্যাকলাইট, হ্যান্ডেল, চেসিস সবই বাতিল জিনিস দিয়ে তৈরি। সঞ্চয়ের গাড়িতে রয়েছে হেডলাইট, ইন্ডিকেটর, হর্ন, ব্যাক গিয়ার মিউজিক, গান শোনার ব্যবস্থা৷ রয়েছে জলের বোতল, লাগেজ রাখার সুবিধাও৷ আর এত কিছু মিলবে মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজারের মধ্যে৷ তবে ব্যাটারি আর মটর বাদে। এই দুটো অর্থের সমর্থ্য অনুযায়ী লাগিয়ে দেন তিনি। 

car

সঞ্জয়ের কথায়, এবারের গাড়িটি মূলত এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কলেজ পড়ুয়ার চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার আগে একবার ট্রায়াল দিয়ে দেখে নিচ্ছেন আরকী। তিনি বলেন, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি, বয়স্ক মানুষ, এমনকি গৃহবধূরা খুব সহজেই এই গাড়ি চালাতে পারবেন। 

এতো গেল গাড়ি বানানোর কথা৷ এছাড়া আরও একটি নেশা রয়েছে সঞ্জয়ের৷ বিভিন্ন গাছের শেকড় থেকে ভাস্কর্য তৈরি৷ ঘূর্ণিঝড় হোক বা কালবৈশাখী, উপড়ে পরা গাছের শিকড়ের অংশ দিয়ে ঘর সাজানো সৌখিন জিনিস, নিজের হাতে তৈরি ভাস্কর্য সাজিয়ে রেখেছেন তাঁর ভাঙ্গা ঘরে। যা সকলে ফেলে দেয়, তা কুড়িয়ে রাখেন সঞ্জয়৷ তার পর কল্পনা শক্তিতে ভর করে তৈরি করে ফেলেন অকল্পনীয় সুন্দর সব জিনিসপত্র৷ আজ যখন ট্রায়াল রানে বেরিয়েছিল তাঁর গাড়ি, সেদিকে তাকাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ‌ এমনকি বাস, লরি থামিয়ে একটু চালিয়ে দেখার আবদারও করেছেন কেউ কেউ৷ পথচারীরা তুলছেন সেলফি। 

তবে সঞ্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও নম্বর নেই৷ তিনি মনে করেন, ওই নম্বরেই নাকি যত বিপত্তি৷ ধরা দিলেই তা সহজলভ্য হয়ে যায়। এদিন শান্তিপুর পৌরসভার সিএসসি মেম্বার শুভজিৎ দে  পথেই তাঁকে সংবর্ধনা দেন। শোনেন গাড়ি তৈরির কাহিনি৷