নিজস্ব প্রতিনিধি: শেষ রক্ষা হল না। বারবার মোবাইল ফোনের সিম কার্ড বদলেও পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে পারল না বাগুইআটিতে জোড়া ছাত্র খুনের ঘটনায় মূল চক্রী সত্যেন্দ্র চৌধুরী। হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
আরও পড়ুন- গার্ডেনরিচে উদ্ধার অন্তত ৭ কোটি, আনা হল নোট গোনার মেশিন
উল্লেখ্য এই খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তার মধ্যে চারজন আগেই পুলিশকে জানিয়েছে সত্যেন্দ্র তাদের অতনুকে খুন করার জন্য বরাত দিয়েছিল। তবে কি কারণে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে তাতে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। তাই ধৃত সত্যেন্দ্রকে জেরা করে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে সিআইডির ধারণা। এই পরিস্থিতিতে একাধিক সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। একটি সূত্রে খবর, প্রধান অভিযুক্ত সত্যেন্দ্রর স্ত্রীর সঙ্গে নাকি নিহত ছাত্র অতনু দে’র বেশ কিছুদিন ধরেই ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। তবে কি সেই কারণেই সত্যেন্দ্রর মূল টার্গেট হয়ে ওঠে অতনু? যদিও পাড়া প্রতিবেশীরা এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। আবার অনেকেই এই সম্ভাবনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টিকে রটনা বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন, সত্যেন্দ্র মূলত অতনুকে খুন করতে চেয়েছিল কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, অতনুকে একা অপহরণ করে তাকে খুন করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু যতবারই অতনুকে ডাকা হয়েছে সে সঙ্গে করে কাউকে নিয়ে হাজির হয়েছে তার কাছে। আর সেই সূত্রেই অভিষেককে নিয়ে সে শেষ বারের মতো দেখা করতে গিয়েছিল সত্যেন্দ্রর সঙ্গে। তখন অতনু এবং অভিষেক দু’জনকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া সত্যেন্দ্র ও তার সাকরেদরা। তাই এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। যদি অতনুর কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকে সত্যেন্দ্রের, তাহলে সে খুন করার জন্য লক্ষ টাকার বেশি খরচ করতে চাইবে কেন? তবে কি এমন কিছু বিষয় যার জন্য টাকা খরচ করতে দু’বার ভাবেনি সত্যেন্দ্র? সেই রহস্য উদ্ধারে মূলচক্রীকে লাগাতার জেরা করছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে সত্যেন্দ্র ধরা পড়ার খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে খুন হওয়া কিশোর অতনু দে’র মা বলেন,” সত্যেন্দ্রর ফাঁসি চাই। পুলিশ যদি আগে কিছু করত তাহলে আমার ছেলেকে এভাবে মরতে হতো না। পুলিশের গাফিলতিতেই আমার ছেলেটার মরা মুখ আমায় দেখতে হল”। একই ভাবে অপর নিহত ছাত্র অভিষেক নস্করের বাবা হরি নস্কর ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,”আমরা সত্যেন্দ্রর কঠোর শাস্তি চাই। শুধু ফাঁসি দিলে হবে না, প্রথমে দুটো হাত কেটে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে খুন করেছে ও, সেই হাত কেটে নেওয়া হোক। এর থেকেও যদি কঠিন শাস্তি থাকে সেটা দেওয়া হোক। তাতে সারা দেশে এমন কাজ করার সাহস আর কেউ দেখাতে পারবে না”। সেই সঙ্গে যারা এতদিন ধরে সত্যেন্দ্রকে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে সাহায্য করেছেন তাঁদেরও কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন তিনি। তিনি বলেন,” সত্যেন্দ্র এতদিন কোথায় ছিল? কারা তাকে মদত দিয়েছে? শুনলাম টিকিট কাটার জন্য কেউ পয়সা দিয়েছে। যারা ওকে সাহায্য করেছে তাদের পায়ে ইট বেঁধে জলে ফেলে দেওয়া হোক। সেটা দেখবে জনগণ।”
একদিকে পুত্র হারানো বাবা-মায়ের যন্ত্রণা, অন্যদিকে তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। গোয়েন্দারা মনে করছেন এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি পরতে পরতে রহস্য দানা বেঁধে রয়েছে। আর সেই রহস্য উদ্ধারে ধৃতদের লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত খুনের কারণ হিসেবে কি উঠে আসে এখন সেটাই দেখার।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>