২০১২-তে একই ভাবে তোলপাড় হয়েছিল বিধানসভা, হাতাহাতিতে জড়িয়েছিল বাম-তৃণমূল

২০১২-তে একই ভাবে তোলপাড় হয়েছিল বিধানসভা, হাতাহাতিতে জড়িয়েছিল বাম-তৃণমূল

কলকাতা:  বগটুই-হত্যাকাণ্ড নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড বিধানসভায়৷ দুই দলের বিধায়কদের হাতাহাতিতে কারও নাক ফাটল, কারও ভাঙল চশমা৷ লেখা হল এক কলঙ্কিত অধ্যায়৷ যদিও, বিধানসভার অন্দরে এহেন মারপিটের ঘটনা এটাই প্রথম নয়৷ ২০১২ সালে একইভাবে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিল ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও তৎকালীন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম৷ তৃণমূল বিধায়কের মারে আহত হয়েছিলেন এক মহিলা সহ দুই বাম বিধায়ক৷ যতাঁদের মধ্যে একজনকে আবার হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়৷ 

আরও পড়ুন- ‘গুন্ডাবাজি করা বিরোধী দলনেতা’, বিধানসভা ইস্যুতে শুভেন্দুকে বিঁধলেন ফিরহাদ

সেদিনের ঘটনার পর রাজ্যের অপর বিরোধী দল কংগ্রেস বিধানসভার ভিতরে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিল৷ যদিও এই ঘটনার জন্য বিরোধীদেরই দায়ী করেছিল তৃণমূল৷ ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস৷ বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যে বেসরকারি আর্থিক সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা চেয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনে বামফ্রন্ট৷ অভিযোগ ছিল, সেই প্রস্তাব উত্থাপন করতে দিলেও আলোচনার সুযোগ দেননি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে অধ্যক্ষের আসনের সামনে চলে যান কয়েকজন বাম বিধায়ক৷ শুরু হয় অশান্তি৷ এর পরেই তিন বাম বিধায়ককে শীতকালীন অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়৷

সেই সময় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর অভিযোগ ককেছিলেন, ”সাসপেন্ড হওয়া বিধায়কদের পক্ষে বিরোধী দলের কোনও বক্তব্যই শুনতে চাননি অধ্যক্ষ৷ প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমব্রম সংবাদমাধ্যমকে বলছিলেন, ‘‘স্পিকারের আসনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ আচমকা কয়েকজন তৃণমূল বিধায়ক (পুরুষ ও মহিলা উভয়) মিলে আমাকে মারতে থাকে৷ আমার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে মারা হয়৷’’ 

এই ঘটনার দশ বছর পর আরও একবার লজ্জাজনক ঘটনা ঘটল বিধানসভায়৷ সোমবার অধ্যক্ষের সামনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়করা৷ নাক ফাটে চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের৷ তাঁর অভিযোগ, শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে ঘুষি মেরেছেন৷ অসিতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, বিধানসভায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হল বিজেপি’র অন্তত ৮ জন বিধায়ককে৷ কারও হাতে, কারও আবার বুকে চোট লেগেছে বলে দাবি৷ 

রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে এদিন আলোচনার দাবি জানান বিজেপি বিধায়করা৷ অধ্যক্ষ সেই দাবি খারিজ করে দেন৷ এর পরেই অধ্যক্ষের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান বিরোধী বিধায়করা৷ বারবার অনুরোধ করার পরেও তাঁরা আসন গ্রহণ করেননি৷ সেই সময় কিছু তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তাঁদের দিকে এগিয়ে যেতেই শুরু হয় হাতাহাতি৷

২০১২ সালে বিধানসভায় বিধায়কদের মারামারি নিয়ে বিচার ও তদন্ত কোনওটাই হয়নি৷ দশ বছর পর আজ যে ঘটনা ঘটল তার তদন্ত হবে কি? ২০১২ সালের ওই ঘটনায় বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, সরকার পক্ষের পিঠ বাঁচাতে বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীদের কাঠগড়ায় তুলেছে৷ বিধানসভার গোলমাল ঠেকাতে মার্শাল ঠিক কী ভূমিকা নিয়েছিলেন তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়৷  অথচ বিধানসভায় যে-সকল সদস্য মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে কোনও কিছুই বলেননি অধ্যক্ষ৷ পরিস্থিতি এমন হয় যে, হেলমেট পরে বিধানসভায় যান কংগ্রেস বিধায়করা৷