হাওলার মাধ্যমে গরু পাচারের টাকা যেত বিদেশে, CBI-এর নজরে কারবারিরা

হাওলার মাধ্যমে গরু পাচারের টাকা যেত বিদেশে, CBI-এর নজরে কারবারিরা

কলকাতা: গরু পাচার চক্রের জাল বিস্তৃত রয়েছে বহুদূরে। শিকড় খুঁজতে তৎপর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ তাঁরা জানতে পেরেছেন, গরু পাচারের বিপুল টাকা হাওলার মাধ্যমে বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে৷ বাংলাদেশ ছাড়াও কালো টাকা পাচার হয়েছে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব এবং নেপালে৷ গোয়েন্দা সূত্রে খবর, শিলিগুড়ি, মুর্শিদাবাদ ও কলকাতার বড়বাজারের বেশ কয়েকজন হাওলা কারবারির মাধ্যমে এই টাকা বিদেশে গিয়েছে। সিবিআই-এর আতস কাচের নীচে রয়েছেন সেই হাওলা কারবারিরা৷ 

আরও পড়ুন- ‘ভেদাভেদকে দূরে সরিয়ে রেখে…’ বিরোধীদের ‘এক’ হওয়ার বার্তা সুকান্তের

সূত্রের খবর, এই হাওলা কারবারিদের মধ্যে রয়েছে তিন ভাই। তাঁদের মধ্যে দু’জন মালয়েশিয়া এবং একজন থাকেন সৌদি আরবে৷ এক সময় তাঁরা তিন জনই ছিলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা। সেখান থেকেই চলত তাঁদের হাওলার কারবার৷ বাংলাদেশ পুলিশ তন্নতন্ন করে তাঁদের খোঁজে শুরু করতেই কলকাতা পালিয়ে আসেন তিন ভাই। এখান থেকে পাড়ি দেয় মালয়েশিয়া৷ এই তিন হাওলা কারবারির সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল গরু পাচার কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের৷ তাঁদের মাধ্যমেই বিদেশে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন গরুপাচার চক্রের কিংপিন৷ বাংলাদেশেও এনামুলের একাধিক কারবারের হদিশ মিলেছে৷ 

পাশাপাশি শিলিগুড়ির কয়েকজন হাওলা কারবারির মাধ্যমে গরুপাচারের টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে নেপালে৷ আবার হাওলার মাধ্যমেই গরুপাচারের টাকা বাংলাদেশ থেকে এসে পৌঁছত এ রাজ্যে। কীভাবে চলত এই লেনদেন? গোয়েন্দা সূত্রে খবর,  গোটা পর্ব ছিল বেশ দীর্ঘ৷ বাংলাদেশে কত গরু পাঠানো হবে, সেই হিসেব আগে থেকেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হত। সীমান্ত পেরিয়ে গরু ওপারে ঢুকে গেলেই এপারের ‘ঘাটাল’ অর্থাৎ পাচার চক্রের সিন্ডিকেটের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি সেই বার্তা পৌঁছে দিত ওপারের পাচারকারীর কাছে। পাচারকারীদের হয়ে গোটা বিষয়টির হিসাব রাখত তাদের অ্যাকউন্ট্যান্ট৷ টাকার পরিমাণ বেশি হলে বাংলাদেশের পাচারকারীরা হাওলা বা হুন্ডির মাধ্যমে পশ্চিমবাংলার পাচারকারীদের টাকা পাঠাত। যারা এই হাওলার কাজ করে, তারা পরিচিত ‘টিটি’ নামে৷ তাদের মাধ্যমেই হাতে নগদ টাকা পেয়ে যেত পাচারকারীরা৷ 

এই হাওলা আসলে কী? সরকারকে ফাঁকি দিয়ে কালো টাকার অবৈধ লেনদেনকেই এককথায় বলা হয় হাওলা৷  আরবিতে এই শব্দের অর্থ কোনও কিছু পাঠানো বা বিশ্বাস। অষ্টম শতাব্দীতে প্রথম শুরু হয় হাওয়ালা’র মাধ্যমে লেনদেন৷ চুরি-ডাকাতির ভয়ে চিন থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত সিল্ক রুটে শুরু হয় হাওলার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন৷ আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া এবং ভারতীয় উপ-মহাদেশে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এটি হল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে এড়িয়ে টাকা লেনদেনের অবৈধ সমান্তরাল ব্যবসা৷ এই ব্যবসার ভিত্তি হল হাওলা অপারেটরদের পারস্পরিক বিশ্বাস৷