এ গ্রামের নাম শুনেই ভেঙে যায় বিয়ে! কিছুতেই ঘুঁচছে না আইবুড়ো নাম

এ গ্রামের নাম শুনেই ভেঙে যায় বিয়ে! কিছুতেই ঘুঁচছে না আইবুড়ো নাম

নাকাশিপাড়া:  পাত্র বিবাহ যোগ্য৷ রোজগারপাতিও বেশ ভালো৷ তার উপর জমিজমা, বাড়ি ঘর সব কিছুই আছে৷ স্থাবর-অস্থাবর জমি মিলিয়ে কয়েক লাখ টাকার সম্পত্তি৷ কিন্তু বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজতে কালঘাম ছুটছে পরিবারের৷ গ্রামের নাম শুনেই মুখ ফেরাচ্ছে মেয়ের বাড়ির লোক৷ 

আরও পড়ুন- মালদায় ভয়বহ দুর্ঘটনা, স্কুলবাস উল্টে আহত ১৫ পড়ুয়া

নদিয়ার নাকাশিপাড়া ব্লকের অন্তর্গত বীরপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোটাবাড়িগাছি গ্রামের যুবকরা পড়েছেন বেজার সমস্যায়৷ বিয়ের বয়স হলেও পাত্রী জুটছে না তাঁদের৷ কেউই তাঁদের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে চাইছে না৷ কিন্তু কেন এই গ্রামে বিয়ে হচ্ছে না? আসলে এর জন্য দায়ী গ্রামের দুরবস্থা৷ 

ভৌগলিক ভাবে প্রত্যন্ত এই গ্রামে নেই পাকা রাস্তা৷ বিদ্যুতের সমস্যা নিরন্তর৷ নেই পানীয় জলের সুব্যবস্থা৷ কেই বা আসবে এই গণ্ডগ্রামে! আপেক্ষের সুর ২৭ পেরনো এক যুবকের গলায়৷ 

বীরপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় সাত হাজার হবে। কিন্তু, এই গ্রামে কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কোনও প্রকল্পের বিন্দুমাত্র সুবিধাও পৌঁছায়নি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নাকি বাংলা আবাস যোজনা, নাম নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিস্তর তরজায় রাজনীতির আঙিনায় গরম হাওয়া বইলেও, এ গ্রামে সে সবের বালাই নেই। এখানে অধিকাংশই বাড়িই কাঁচা। গ্রামের অধিকাংশ পুরুষই পেশায় কৃষিজীবী৷ সেই সঙ্গে চলে পশুপালন। নতুন প্রজন্মও এই পেশার বাইরে বেরোতে পারেনি৷ 

গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থাও বেহাল৷ দুটি স্কুল রয়েছে বটে৷ তাও আবার ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে৷ এই এলাকায় অধিকাংশ ছেলেমেয়েই এই দুটি স্কুলে পড়াশোনা করে৷ ফলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে বিশাল বৈষম্য রয়েছে৷ স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতাল। যা মোটাবাড়িগাছি থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে। আপদ্কালীন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা ধারেকাছে নেই৷ রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হলে রোগী নিয়ে ছুটতে হয় সেই বেথুয়াডহরিতে৷ 

মোটাবাড়িগাছি থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে পৌঁছতে গেলে পেরতে হয় বেশ কয়েকটি গ্রাম৷ উন্নয়নের ছিঁটেফোঁটাও পৌঁছয়নি সেখানে৷ এমনকী একটাও কংক্রিটের রাস্তা নেই৷ এখন তো আবার টোটোও সেখানে যেতে চাইছে না৷ টোটোওয়ালাদের কথায়, ভাঙা চোরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে গেলে যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে যায়৷ স্থানীয় মানুষের মুখ থেকেই জানা গেল, দোগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাটপুকুর আর বীরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোটাবড়গাছি— গোটা এলাকাই অঘোষিত ভাবে সামাজিক বয়কটের শিকার! কোনও পরিবারই এই এলাকায় তাঁদের মেয়েকে পাত্রস্থ করতে নারাজ৷ মেয়ের বাড়ির সাফ কথা এই গ্রাম ছাড়লে তবেই বিয়ে সম্ভব৷ এখন ভিটে মাটি ফেলে কী ভাবে অন্যত্র যাওয়া সম্ভব!  

এদিকে বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট৷ তার আগে কী হাল ফিরবে  বীরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের? উত্তর খুঁজছে এখানকার মানুষ৷