স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর, লক্ষ্মীবালা ১০২! পালকি চড়ে পতাকা তুলতে এলেন ‘টট্টরে বুড়ি’

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর, লক্ষ্মীবালা ১০২! পালকি চড়ে পতাকা তুলতে এলেন ‘টট্টরে বুড়ি’

পূর্ব মেদিনীপুর: তিনি ব্রিটিশ রাজ দেখেছেন৷ দেখেছেন প্রবল স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ারে ব্রিটিশ শাসন ভেঙে টুকরো টুকরো হতে৷ সেই তিনিই দেখলেন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি৷ ১০২ বছরের লক্ষ্মীবালা মাইতি এমন এক টাইম মেশিন, যাঁর হাত ধরে ফিরে যাওয়া যায় ইতিহাসের পাতায়৷ সোমবার স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে তিনি এলেন৷ তাঁর হাতেই উত্তোলিত হল তেরঙ্গা৷ ছলছল করে উঠল তাঁর দুই চোখ৷ হয়তো তাঁর মনের কোণে উঁকি দিয়ে উঠেছিল ৭৫ বছর আগের সেই পুরনো স্মৃতি৷ কত রক্ত, কত লড়াই, কত আত্মবলিদানের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা পেয়েছে দেশ৷ সেই সব দিনগুলির সাক্ষী থেকেছেন রূপনারায়ণের পারের এই লক্ষ্মীবালা৷ 

আরও পড়ুন- গরু পাচারের টাকা অনুব্রত-কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে? সিবিআই নজরে আরও ১৫!

১৯৪৭ সালে ১৫ অগাস্ট, স্বাধীন হল ভারত৷ এর আগেই অবশ্য বিয়ে হয়ে গিয়েছিল লক্ষ্মীবালার৷ কোলাঘাটের এক কৃষক পরিবারের বউ হয়ে আসেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা মেদিনীপুর জেলার অবদান কারও অজানা নয়৷ লক্ষ্মীবালা তখন যুবতী। গোরা সাহেবদের নির্মম অত্যাচার,  স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীর ধনুক ভাঙা পণ, তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার-এখনও চোখে ভাসে তাঁর৷ বয়সের ভারে বহু স্মৃতি মলিন হলেও, ভোলেননি গর্জে ওঠার সেই দিন।  

ছয় ছেলেমেয়ে, আঠারো জন নাতি নাতনি, সাত নাতজামাই, সাত নাতবৌ নিয়ে ভরা সংসার লক্ষ্মীবালার৷ সকলের মাথার উপর তিনি এখনও বটবৃক্ষের ছায়া৷ চোখে মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট৷ গালে তাঁর ফোগলা হাসি৷ বয়স হলেও বেশ চনমনে তিনি। তবে বিশ্রাম নিতে নারাজ৷ বিশ্রামের কথা শুনলেই বলেন, “ভাল লাগে না। কাজ করতেই ভাল লাগে।” এখনও নিয়ম মাফির কোলাঘাট নতুন বাজারে সবজি বিক্রি করেন ১০২ বছরের এই ‘তরুণী’।

তাঁর মুখে শোনা যায় ‘ওলাউঠো লালমুখো’দের গল্প। চড়া বাজারে সবজি বেচতে বেচতেই গল্প করেন ফেলে আসা সেই দিনগুলোর কথা৷  যখন ১৬ আনায় পাওয়া যেত রূপনারায়ণের ১৬টি ইলিশ, ৭ আনায় একমন ধান, ৩ টাকায় সোনার নাকফুল৷ সেই সময় আয়ও অবশ্য ছিল কম৷ দিনভর খেটে উপার্জন হত মাত্র ২ আনা। এই মানুষগুলোর হাত ধরেই বারবার আমরা ফিরে যাই অতীতের দিনে৷

সোমবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কোলাঘাটের এক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছিলেন স্বাধীনতার সাক্ষী হয়ে থাকে লক্ষ্মীবালা মাইতিকেই৷ তাঁকে দিয়েই পতাকা উত্তোলন করেন তাঁরা৷ কোলাঘাট রাধামাধব মন্দিরে প্রথমে লক্ষ্মীবালাকে চন্দন, উত্তরীয়, ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এর পর সুন্দর করে সাজানো একটি পালকিতে তাঁকে বসিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা৷ সাদা পাটভাঙা শাড়িতে ঘোমটায় ঢাকা মুখ৷ তাঁর ফাঁক দিয়েই দু’চোখ ভরে দেখলেন স্বাধীনতার আকাশ। কানে ভেসে এল দেশমাতৃকার জয়ধ্বনি, চারিদিকে উড়তে দেখলেন আমাদের গর্বের তেরঙ্গা৷