৩৮ বছর পর জেগে উঠল বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি! বাড়ছে আতঙ্ক

৩৮ বছর পর জেগে উঠল বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি! বাড়ছে আতঙ্ক

53e264507400281392a0f3811db31175

কলকাতা: ফের জেগে উঠল বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা লোয়া। ১৯৮৪ সালে শেষবার অগ্নুৎপাত ঘটেছিল এই আগ্নেয়গিরিতে৷ রবিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টা৷ জেগে ওঠে হাওয়াই দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত মাউনা লোয়া৷ গলগল করে বেরতে থাকে লাভা৷ জারি করা হয় জরুরি সতর্কতা৷ 

আরও পড়ুন- ইউক্রেন নয়, এই দেশকে ‘টার্গেট’ করেছিলেন পুতিন!

হাওয়াই দ্বীপের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরি। ১৮৪৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৩৩ বার লাভা উদগীরণ হয়েছে এর জ্বালামুখ থেকে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৪৩ সালের আগে মাউনা লোয়ার অগ্ন্যুৎপাতের কোনও নথি সরকারের কাছে নেই৷ 

 
দীর্ঘ ৩৮ বছর শান্তই থাকার পর ফের জেগে উঠেছে মাউনা লোয়া। পরিসংখ্যান বলছে, ১৮৪৩-এর পর থেকে এত দীর্ঘ ব্যবধানে শান্ত থাকেনি হাওয়াই দ্বীপের এই আগ্নেয়গিরি। ২৮ নভেম্বর এর লাভা শুধুমাত্র শিখর পর্যন্ত ছিল৷ সংলগ্ন এলাকা থেকেও কোনও বিপদের খবর মেলেনি। কিন্তু, অগ্ন্যুৎপাতের পর থেকে দ্বীপে লাভা প্রবাহ শুরু হয়েছে। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ 

মাউনা লোয়ার আগ্নেয়গিরি শিখরে লাভার মুখ কিলাউয়া থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। কিলাউয়া হল হাওয়াই দ্বীপেরই অন্য একটি ছোট আগ্নেয়গিরি। ২০২১ সালে প্রথম এই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। ফলে দ্বৈত-অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনার সাক্ষী হতে হচ্ছে হাওয়াই-এর মানুষকে। যদিও কিলাউয়ের অগ্ন্যুৎপাত এখনও পর্যন্ত গর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরি অস্থিরতার চরম পর্যায়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসাবে গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় ভূমিকম্পের হার বৃদ্ধি পাওয়াকেই চিহ্নিত করেছেন ভূতত্ত্ববিদরা। চলতি বছর শুধুমাত্র জুন মাসেই ৫ থেকে ১০ বার এই অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছিল। জুলাই এবং অগাস্ট মাসে ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের মধ্যে  ভূমিকম্পের সংখ্যা ১০০ পার করে যায়৷

মাউনা লোয়া থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরুর পর আগ্নেয়গিরির এক পাশ দিয়ে লাভা প্রবাহ শুরু হয়েছে। তবে একটাই স্বস্তি যে, এই অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব হাওয়াই জাতীয় উদ্যানের বসতির উপর পড়বে না৷ সোমবার এমনটাই আস্বস্ত করেছেন আমেরিকার ভূতাত্ত্বিকরা৷ তবে নিরাপত্তার খাতিরে আপাতত পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকছে জাতীয় উদ্যানের দরজা। পাহাড়ে ট্রেকিং-এর উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷

আমেরিকার ভূতত্ত্ব বিভাগ জানাচ্ছে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভা মূলত উত্তর-পূর্বের এলাকাগুলিকে প্রভাবিত করবে। তবে, আগ্নেয়গিরির গ্যাস এবং সূক্ষ্ম ছাই হাওয়ায় ভেসে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ 

হনুলুলুর ‘ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস’ জানাচ্ছে, লাভা নিঃসরণের ফলে দ্বীপের বৃহত্তর অংশ ছাইয়ের আস্তরণে ঢাকা পড়বে। মাউনা লোয়ার অগ্ন্যুৎপাতের জেরে বিমান চলাচলও বিঘ্নত হবে। লাভার থেকে সৃষ্ট ছাই যানবাহন, বাড়ি, গাছপালার ক্ষতি করতে পারে। দূষিত হতে পারে নদীর জল। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উপরেও আঘাত আসতে পারে বলে খবর আবহাওয়া দফতর সূত্রে।

এই ছাইয়ে চোখ এবং ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। হনলুলু প্রশাসনের তরফে আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে, যাঁদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তাঁরা যেন বাড়ির বাইরে না বেরোন। বাইরে বেরোলে মাস্ক বা কাপড় দিয়ে যেন নাক-মুখ ঢেকে নেন। লাভার এই ছাই ক্ষতি করতে পারে শস্য এবং জন্তুদেরও।