কলকাতা: রাত পোহালেই মরু প্রদেশ কাতারে শুরু হবে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ৷ বিশ্বকাপ ঘিরে চরম উন্মাদনায় ফুটবল প্রেমীরা৷ কার ঘরে যাবে কাতার বিশ্বকাপের ট্রফি? তা নিয়ে শুরু জল্পনা৷
আরও পড়ুন- উদ্বোধনী ম্যাচ জিততে ঘুষ দিয়েছে কাতার! বিস্ফোরক দাবি
প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর বসে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর৷ ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জেরে বিশ্বকাপ স্থগিত রাখা হয়৷ সবচেয়ে বেশি পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল৷ চারবার জার্মানি আর ইতালি৷ দু’বার করে জিতেছে আর্জেন্তিনা, ফ্রান্স এবং উরুগুয়ে৷ স্পেন আর ইংল্যান্ডের ঘরে ট্রফি গিয়েছে একবার৷ বিশ্বকাপের এই ট্রফির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে একটা ইতিহাস৷
শুরুতে বিশ্বকাপের এই ট্রফির নাম ছিল জুলে রিমে বিশ্বকাপ৷ ১৯৪৬ সালে ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমেকে সম্মান জানিয়ে এই নামকরণ করা হয়৷ ১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফিটি পাকাপাকিভাবে তাদের দিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে মিলানের শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগা নতুন বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা তৈরি করেন। বিশ্বের সাতটি দেশের ৫৩ জন ভাস্কর ফিফার কাছে বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা জমা দিয়েছিলেন, এদের মধ্যে গাজ্জানিগার নকশাতেই সিলমোহর দেওয়া হয়। এরপর থেকে এটির নাম হয়ে যায় ‘ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি’। যা ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপজয়ী পশ্চিম জার্মানির হাতে প্রথম তুলে দেওয়া হয়৷
২০০২ সালে এক সাক্ষাৎকারে গাজ্জানিগা বলেছিলেন, ‘এই ট্রফিকে বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করে এর নকশা তৈরি করেছিলাম। তবে কোনও সুপারহিউম্যানের বীরত্ব ভেবে নয়। এটা প্রচলিত কোনও কাপ নয়।’’ ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ৯৫ বছর বয়সে সিলভিও গাজ্জানিগার মৃত্যু হয়। গাজ্জানিগার মৃত্যুর পর তার ছেলে জর্জি গাজ্জানিগা জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করার সময়ই তাঁর বাবা বুঝেছিলেন যে, তাঁর আঁকা নকশাটি দেখে অনেকেই হয়তো বুঝতে পারবেন না৷ তাই তিনি নিজের সঙ্গে করে একটি প্লাস্টার মডেল নিয়ে গিয়েছিলেন।
জর্জিওর কথায়, ‘‘আয়োজকরা নকশাটি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝেছিলেন যে এটি একটি ফটোজেনিক নকশা হবে। এটি যেমন হাতে তুলে ধরা সহজ তেমনই দেখতেও নান্দনিক লাগবে।’’ বর্তমান ট্রফিটি ১৮ ক্যারাট সোনা দিয়ে তৈরিস যার বেসটি মেলচাইটের। ৩৬.৮ সেন্টিমিটার উঁচু এই ট্রফির ওজন ৬.১ কিলোগ্রাম৷ ট্রফির তলদেশে জয়ী দেশের নাম খোদাই করে তা তুলে দেওয়া হয়৷
কিন্তু কী ভাবে তৈরি হল এই ট্রফি?
প্রথমে কারখানায় তামা ও দস্তার তৈরি খালি কাঠামোর ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত ও অতিরিক্ত ধাতব পদার্থগুলো কেটে কাঙ্ক্ষিত আকার দেওয়া হয়। এরপর হাতুড়ি দিয়ে সেই ট্রফিতে খুঁটিনাটি নকশাগুলি ফুটিয়ে তোলা হয়। তারপর পলিশ করে কার উপর প্রলেপ দেওয়া হয়। আল্ট্রাসনিক পদ্ধতিতে অতিরিক্ত সব ধাতব ও গ্রিজ বের করে রিনসিংয়ের মাধ্যমে ময়লা ও পরিষ্কারক দ্রব্যও মুছে ফেলা হয়। গ্লাইডিংয়ের পর ডিসটিলড ওয়াটার দিয়ে ট্রফিটি পরিষ্কার করা হয়। তাতে সবুজ মার্বেল পাথর যোগ করার পর সেটি পরিপূর্ণতা পায়৷ এরপর জারপন দিয়ে ট্রফিটি পলিশ করা হয়। জিডিই বার্টনির একজন বিশেষজ্ঞ সূক্ষ্মভাবে এটি পরীক্ষা করেন দেখেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
এর পর তাতে একটি সোনার মেডেল যুক্ত করা হয়। এরপর অ্যালকোহল দিয়ে তা পরিষ্কার করা হয়৷ বলে রাখা ভালো, এই কারখানা থেকেই সবচেয়ে বিখ্যাত ট্রফিগুলো প্রস্তুত করা হয়। এরমধ্যে আছে উয়েফা সুপার কাপ, উয়েফা ইউরোপা লিগ, ফিফা বিশ্বকাপ ও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>