এ যেন অবিকল পৃথিবী, নীল গ্রহের দোসর খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা, ভিতরে টলটলে জল

এ যেন অবিকল পৃথিবী, নীল গ্রহের দোসর খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা, ভিতরে টলটলে জল

নিউ ইয়র্ক:  এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বাইরেও কি রয়েছে আরও এক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড? সেখানে আছে কি প্রাণের অস্তিত্ব? এই প্রশ্ন চলে আসছে আদি অনন্ত কাল থেকে৷ মহাশূন্যর দিকে টেসিস্কোপ তাক করে নিরন্তর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা৷ সম্ভবত কাঙ্খিত সাফল্যের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা৷ মহাকাশে দেখা মিলল পৃথিবীর দোসরের৷ অবিকল নীল গ্রহের মতো দেখতে৷ কানাডার মনট্রিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল মহাকাশে এই গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই গ্রহের নাম দিয়েছেন টিওআই-১৪৫২বি বা ‘সুপার আর্থ’।

আরও পড়ুন- আকাশ জুড়ে রং-এর খেলা! রামধনু, না অন্যকিছু? প্রকৃতির রহস্যে হতবাক মানুষ

একটি বিবৃতিতে নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সৌরমণ্ডলে বেশ কয়েকটি উপগ্রহের সঙ্গে ‘সুপার আর্থ’-এর কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতির উপগ্রহ গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো এবং শনির উপগ্রহ টাইটান, এনসিলাডাসের ভিতর মহাসমুদ্র লুকিয়ে রয়েছে বলে আন্দাজ করা হয়। সেই সুবিশাল জলরাশি অবশ্য লুকিয়ে রয়েছে বরফের নীচে৷  কিন্তু, সুপার আর্থের মধ্যে টলটল করছে জল৷ 

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন এই গ্রহ আকারে পৃথিবীর চেয়েও বড়। পৃথিবীর আয়তনের থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। সুপার আর্থে রয়েছে পৃথিবীর চেয়েও গভীর সমুদ্র৷ তবে এই গ্রহের প্রদক্ষিণ বৈশিষ্ট্যে রয়েছে এক বিশেষ চমক৷ কারণ, একটি নয়, একসঙ্গে দু-দু’টি নক্ষত্রের চারদিকে ঘোরে টিওআই-১৪৫২বি।

পৃথিবী থেকে সুপার আর্থের দূরত্ব ১০০ আলোকবর্ষ৷ নীল গ্রহের চেয়ে পাঁচ গুণ বড় এই গ্রহের মধ্যে রয়েছে এক সুবিশাল সমুদ্র। যা সমগ্র গ্রহের ৩০ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত৷ আর তাতে টলমল করছে জল। সমগ্র পৃথিবীতে যতটা জল আছে, তা ‘সুপার আর্থ’-এর মাত্র এক শতাংশ ভরের সমান।

আরও নানা বৈশিষ্ট লুকিয়ে রয়েছে পৃথিবী সাদৃশ এই গ্রহে৷ ‘সুপার আর্থ’-এর এক বছর হয় মাত্র ১১ দিনে। কারণ একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করতে তার সময় লাগে মাত্র ১১ দিন৷ যে নক্ষত্রের চারিদিকে ‘সুপার আর্থ’ প্রদক্ষিণ করে, সেটি আকারে বেশ ছোট এবং গ্রহটির অনেক কাছে রয়েছে৷ এই দুইয়ের দূরত্ব সূর্য ও শুক্রের মধ্যে দূরত্বের সমান। তবে অপর যে নক্ষত্রটির চার দিকে এই গ্রহটি ঘোরে, সেটির দূরত্ব অনেক খানি। তাই তার চার দিকে একবার ঘুরতেও ‘সুপার আর্থ’-এর সময় লেগে যায় ১ হাজার ৪০০ বছর।

১০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা এই গ্রহের খুঁটিনাটি জানতে আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জল থাকলেও ‘সুপার আর্থে’ প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। কারণ, আপাদমস্তক পাথরে ঢাকা এই গ্রহটিতে সামান্য পরিমাণে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম থাকলেও, অক্সিজেন নেই বলেই অনুমান। আপাতত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের কুঠরিতে চোখ খেরে আরও ভালো ভাবে এই গ্রহটিকে পর্যবেক্ষণ করবেন বিজ্ঞানীরা। তার পরই এই গ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।