বাংলাদেশের টিনার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন তামিলনাড়ুর সুবিক্ষা, লড়াই শেষে শুরু নতুন পথ চলা

বাংলাদেশের টিনার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন তামিলনাড়ুর সুবিক্ষা, লড়াই শেষে শুরু নতুন পথ চলা

5ac68bd888eb52a89a620c7717171bb6

চেন্নাই: আলাপটা হয়েছিল একটি ডেটিং অ্যাপে৷ সেখান থেকেই প্রেম ও শেষে একে অপরের হাত ধরে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত৷ তার পর আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে চার হাত এক হওয়া৷ ভাবছেন হয়তো, এই গল্প তো খুবই সাদামাটা৷ এমনটা তো আকছাড়ই হয়ে থাকে৷ কিন্তু, এই গল্পে রয়েছে একটা টুইস্ট৷ কারণ যাঁরা বিয়ের পিড়িতে বসেছিলেন, তাঁরা নারী-পুরুষ নয়৷ দুই সমকামী তরুণী৷ তাঁদের মধ্যে একজন দক্ষিণ ভারতীয়। অন্যজন বাংলাদেশি৷ তাঁদের বর্তমান ঠিকানা কানাডা৷ তবে তাঁদের বিয়ের আসর বসেছিল তামিলনাড়ুতে৷ 

আরও পড়ুন- কী ভাবে ভারত থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার চুরি করেছিল ব্রিটেন?

তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে সুবিক্ষা সুব্রামানি বাবা-মায়ের সঙ্গে কানাডায় সেটেল্ড। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় টিনা দাসের। টিনার পৈতৃক ভিটে বাংলাদেশে। আলাপ-পরিচয় থেকেই তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক৷ ৬ বছর সম্পর্কে থাকার পর তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন৷ ঠিক করেন তামিল ব্রাহ্মণ রীতি মেনেই সাত পাকে বাঁধা পড়বেন দু’জনে। সুবিক্ষার এই সিদ্ধান্তে পাশে দাঁড়ায় তাঁর পরিবার৷ তবে তাঁরা চেয়েছিলেন তামিলনাড়ুতে নয়, বিয়ের আয়োজন হোক কানাডাতেই৷ বিশেষ করে সুবিক্ষার বাবা কানাডায় সমস্ত ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। তবে ডেস্টিনি তাঁদের নিয়ে আসে ভারতে৷ 

tina

যেভাবে তাঁদের পরিবার-পরিজনেরা এই সিদ্ধান্তকে সম্মতি জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে বিস্মিত সুবিক্ষা। শুধু তাই নয়, সমাজের প্রথা ভাঙা এই বিয়ে দিতে রাজি হন এক পুরোহিতও। সম্পূর্ণ রীতি মেনে ধুমধাম করেই সাত পাকে বাঁধা পড়েন সুবিক্ষা ও টিনা৷ 

এখানে আরও একটি গল্প রয়েছে৷ সুবিক্ষা আসলে উভকামী। এর আগে একজন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। টিনার সান্নিধ্যে আসার পর সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন৷ টিনার প্রতি তাঁর আবেগ, ভালোবাসার কথা পরিবারকে বুঝিয়ে বলতে সক্ষমও হন তিনি। তাঁদের সম্পর্ক খোলা মনে মেনে নেন তাঁর মা-বাবা-ভাইও৷ কিন্তু, টিনার ক্ষেত্রে লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না৷ বাংলাদেশে থাকাকালীন মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তাঁর বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল পরিবার৷ রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারের মেয়ে সমকামী, এই বিষয়টা তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের ধারণা ছিল, বিয়ে হওয়ার পর সবটা ঠিক হয়ে যাবে৷ 

সুবিক্ষা

কিন্তু তেমনটা হয়নি। বিয়ের পর নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে৷ তাঁর যৌন পছন্দ সকলের কাছে ছিল অসুস্থতা৷ কেউ ভালোভাবে কথাটুকুও বলতে চাইত না তাঁর সঙ্গে। ৪-৫ বছর এভাবেই কাটে টিনার জীবন৷ দাম্পত্য জীবন কখনই সুখের হয়নি তাঁর৷ এক সময় সন্তানের জন্যে তাঁকে চাপ দেওয়া শুরু হয়৷ তখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নেন৷ শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে আসেন টিনা৷ 

দু’জনে অনেক পথ পেরিয়ে অবশেষে ধরা পড়েছেন একে অপরের বাহুডোরে৷ যেখানে ঘটেছে দুটি মনের মেল বন্ধন৷ তাঁদের এই সম্পর্ক এবং বিয়ে অন্যান্য সমকামী যুগলদেরও উৎসাহিত করবে বলেই আশাবাদী টিনা-সুবিক্ষা৷