নিজস্ব প্রতিনিধি: বিগত কয়েক মাস ধরে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কয়লা পাচার, গরু পাচার-সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে। যে ঘটনায় প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে রাজ্য সরকার। তৃণমূল বিরোধীরা এই ইস্যুতে রাজ্যকে তীব্র আক্রমণ করছে। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে আগের চেয়ে কয়লা, গরু পাচার তদন্তে অনেকটাই গতি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই অবস্থায় হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চাইছে না রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি’ও। পাচার কাণ্ডের তদন্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে তারাও। আর সেই সূত্রে সিআইডি শনিবার গ্রেফতার করল এনামুল হক ঘনিষ্ঠ জেনারুল শেখকে। গরু পাচার কাণ্ডে মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। রঘুনাথগঞ্জ থানার অন্তর্গত জালিবাগান এলাকার বাসিন্দা জেনারুল বহুদিন ধরেই এনামুল হকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গরু পাচার কাণ্ডে সে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলেই সিআইডির দাবি। শনিবার সন্ধ্যায় রঘুনাথগঞ্জ থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে কয়েক বছর আগের একটি পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে জেনারুলকে।
আরও পড়ুন- পলাতক বিনয় মিশ্রের সঙ্গে যোগ শুভেন্দুর! বিস্ফোরক অভিযোগ অভিষেকের
এখানে বিরোধীদের প্রশ্ন, এতদিন ধরে সিআইডি তদন্ত প্রক্রিয়া সেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি কেন? তবে কি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা পাচার-কাণ্ডে তৎপরতা বাড়াতেই নড়েচড়ে বসার চেষ্টা করছে রাজ্যের গোয়েন্দা শাখা? আসলে পাচার-কাণ্ডের জেরে যথেষ্ট মুখ পুড়েছে রাজ্য প্রশাসনের। আগামী বছরের গোড়ার দিকেই হবে পঞ্চায়েত ভোট। এই পরিস্থিতিতে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সিআইডি পাচার কাণ্ডে তৎপরতা বাড়াতে চাইছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সিআইডির গোয়েন্দারা মনে করছেন বিএসএফ এবং রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি জড়িত আছেন পাচার কাণ্ডে। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে রঘুনাথগঞ্জ সীমান্তে প্রায় ১৯০০ গরু আটক করে বিএসএফ। সেগুলি পরে রাজ্য পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয় তারা। রাজ্য পুলিশ তখন শিমুলিয়া গ্রামের একটি খোঁয়াড়ে গরুগুলিকে পাঠায়। সেই খোঁয়াড়ের মালিক এনামুল হকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল এনামুলের। এর পরে একদিন দেখা যায় ওই খোঁয়াড়ে থাকা গরুগুলি সব উধাও হয়ে গিয়েছে। এরপর পুলিশ আদালতে জানায় ওই গরুগুলির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে এতগুলি গরু কীভাবে মারা গেল তা নিয়ে সন্দেহ হয় সিআইডি গোয়েন্দাদের। এরপর সিআইডি তদন্তে নেমে বুঝতে পারে বিএসএফের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের একাংশ এই কাণ্ডে যুক্ত রয়েছে। এরপর তদন্ত এগোতেই এবার সিআইডির জালে ধরা পড়েছে জেনারুল শেখ। গরু পাচারের ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ জেলার যে বড় যোগ রয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সিআইডির কাছে।
কিন্তু প্রশ্ন, ২০১৯ সালে যে অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছিলেন সিআইডি কর্তারা, তারপরে তাঁদের যতটা তৎপরতা বাড়ানোর কথা ছিল সেটা কী করা হয়নি? প্রশ্ন উঠছে যে, পুলিশকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে পাচার-কাণ্ডে জড়িত থাকার যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর এর আগে কি সিআইডি’র তরফে নেওয়া হয়নি? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন রাজ্যবাসী। তাই বর্তমানে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তৎপরতা বাড়াতেই কিছুটা হলেও এখন নড়েচড়ে বসেছে সিআইডি। আর সেটা রাজ্য প্রশাসনের ইমেজ বাড়াতেই করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>