কলকাতা: তাওয়াং সীমান্তে ভারত ও চিন সেনার সংঘর্ষের পর থেকেই ফের উত্তপ্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা৷ সেই উত্তেজনার আবহেই ফের অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করল ভারত। যদিও এই উৎক্ষেপণ পূর্বনির্ধারিত ছিল বলেই প্রতিরক্ষাসূত্রে খবর। তবে তাওয়াংয় সীমান্তে চিনা আগ্রাসন রুখতে ইতিমধ্যেই নজরদারি বাড়িয়েছে ভারতীয় সেনা। আকাশ পথেও কড়া নজর রাখছে ভারত। এই আবহেই ভারতীয় সেনার মুকুটে জুড়ে গেল নতুন পালক। শুধু তাই নয়, এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে বার্তা দেওয়া হল চিনকেও৷
আরও পড়ুন- ‘অগ্নি’ পরীক্ষায় সফল হল ভারত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্র চিনকে চাপে ফেলতে পারে৷ কারণ এই ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০০ কিলোমিটার দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। ফলে প্রায় গোটা চিনের যে কোনও প্রান্তে আঘাত হানতে পারবে অগ্নি-৫। ভারত ছাড়া আর মাত্র কয়েকটি দেশের কাছেই রয়েছে এই ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র৷ যা কিনা ৫০০০ মিটারের বেশি দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে। ভারত ছাড়া এই প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইজরায়েল, ব্রিটেন এবং উত্তর কোরিয়ার হাতে৷
অগ্নি ৫ শুধু চিন নয়, আফ্রিকা এবং ইউরোপের কিছু অংশের উপরেও আঘাত হানতে পারবে৷ কয়েকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ৮,০০০ কিলোমিটার দূরে ছুটে গিয়েও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এই ব্যলেস্টিক মিসাইল। এক সঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত ভাবে আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্রের। অগ্নি-৫ পরমাণু হামলা চালাতেও দক্ষ। ১,৫০০ কেজি পরমাণু অস্ত্র বহন করতে সক্ষম ভারতের এই ব্যালেস্টিক মিসাইল৷ চিন ও পাকিস্তানের মনে আতঙ্ক জাগিয়ে রাতের অন্ধকারেই অগ্নি-৫-এর সফল উৎক্ষেপণ করে ভারত।
অগ্নি-৫-এর দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৭ মিটার। পরিধি ২ মিটার। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেমকেও ধোঁকা দেওয়ার প্রযুক্তি রয়েছে অগ্নি-৫-এ৷ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে অগ্নি ১ থেকে ৫, এই পুরো সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও। অগ্নি ১-এর পাল্লা ৭০০ কিমি, অগ্নি ২-এর ২ হাজার কিমি, অগ্নি ৩ এবং ৪-এর পাল্লা আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার কিমি। অগ্নি সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাল্লা অগ্নি ৫-এর৷ ৫,৪০০ কিলোমিটার৷
এর চেয়ে একধাপ উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি জন্য গবেষণা চালাচ্ছে চিন, রাশিয়া ও আমেরিকা৷ হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে তারা৷ যা শব্দের গতিবেগের চেয়ে পাঁচ থেকে ২৫ গুণ দ্রুত ছুটবে। পিছিয়ে নেই ভারতও৷ সেনাবাহিনী সূত্রে খবর, আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে ভারতও হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মস-২ তৈরি করে ফেলবে।
ভারতের অগ্নি-৫-এর সঙ্গে চিনের তৈরি ডিএফ-২৬-এর তুলনা করা হয়ে থাকে। ডিএফ-২৬ ১২০০ থেকে ১৮০০ কেজি পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম।এটিও আঘাত হানতে পারে ৫০০০ কিলোমিটার দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে।
তবে রিপোর্ট বলছে, চিনের ডিএফ-২৬-এর চেয়ে ভারতের অগ্নি-৫-এর গুণমান অনেক ভাল। হালকা বোঝা নিয়ে অগ্ন-৫ প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারে।
২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর প্রথম অগ্নি-৫-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়। এর পর ২০২২-এর ১৫ ডিসেম্বর ওড়িশা উপকূলে আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে অগ্নি-৫ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ হল।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>