কলকাতা: তাঁর মাথায় রয়েছে বিস্ফোরণের অভিযোগ৷ জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগ বন্দি রয়েছেন গুয়াহাটির সেন্ট্রাল জেলে৷ আলফা গোষ্ঠীর সেই ছাত্রনেতাই স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা প্রথম স্থান অধিকার করে সকলের নজর কাড়লেন৷ অসমের রাজ্যপাল স্বর্ণপদক দিলেন অভিযুক্ত যুবনেতা সঞ্জীব তালুকদারের হাতে। কিন্তু, মেধাবী ছেলের জেল মু্ক্তি না হওয়ায় মন খারাপ পরিবারের।
আরও পড়ুন- ব্যাগ চেক করতেই উদ্ধার ৪ রাউন্ড কার্তুজ! বিমানবন্দরে আতঙ্ক
২০১৯ সালের ঘটনা। অসমের রাজধানী দিসপুরে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় সে রাজ্যের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ অসম বা আলফা (ULFA)। ওই বিস্ফোরণে কেউ প্রাণ না হারালেও জখম হন ১২ জন৷ সেই মামলাতেই গ্রেফতার হন সঞ্জীব তালুকদার। এর পর থেকে তাঁর ঠিকানা গুয়াহাটির জেল৷ তাঁর মামলা গুয়াহাটি হাই কোর্টে বিচারাধীন।
সঞ্জীবের পরিবার সূত্রে খবর, ২০১৯-এর ঘটনায় যখন সঞ্জীবকে গ্রেফতার করা হয়, তখন তিনি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোটানির এমফিলের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভাপতিও ছিলেন তিনি৷ বিস্ফোরণের অভিযোগে গ্রেফতার হলেও তিনি স্থির করেন জেলে বসেই এমফিল শেষ করবেন। শুরু করেন পড়াশোনা৷ কিন্তু, সমস্যা হল জেলে এই বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ ছিল না৷ ফলে তিনি সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নেন। ভর্তি হয়ে যান কৃষ্ণকান্ত হান্ডিক স্টেট ওপেন ইউনিভার্সিটিতে৷ সমাজবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তরের পড়া শুরু হয় তাঁর৷ জেলে বসেই শুরু করেন স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা৷ সম্প্রতি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। তাতেই তাঁর ফল দেখে চমকে উঠেছেন সবাই৷ তাক লেগেছে গোটা অসমের।
জেলবন্দি সঞ্জীব সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। সেখানে ৭১ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন ২৯ বছরের ছাত্র নেতা। রীতি অনুযায়ী তাঁকে স্বর্ণপদক দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন অসমের রাজ্যপাল জগদীশ মুখি৷ লেখালেখি এবং বাগ্মীতার জন্যেও সাহিত্যিক মহলে সুপরিচিত ছিলেন সঞ্জীব৷ সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ছাড়াও IGNOU থেকে সার্টিফিকেট ইন এইচআইভি অ্যান্ড ফ্যামিলি এডুকেশন (CAFE) এবং সার্টিফিকেট ইন হিউম্যান রাইটস (CHR) কোর্স সম্পন্ন করেছেন তিনি৷ এছাড়াও KKHSOU থেকে জিওইনফরমেটিক্সে স্নাতকোত্তর শংসাপত্রের জন্যও উপস্থিত হয়েছেন, যার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি৷।
সঞ্জীবের বোন ডলিও দাদার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত৷ তিনি বলেন, “দাদার সাফল্যে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে আমাদের। ও স্বর্ণপদক পেয়েছে৷ এতে স্বভাবতই আমারা খুশি৷ কিন্তু আমাদের মন ভাল নেই। কারণ ও এখনও জেলে রয়েছে। আমরা জানি ও নির্দোষ। আলফার সঙ্গে ওর সংযোগের কথা শোনার পর আমরা অবাক হয়েছিলাম। আশা, আমরা ন্যায়বিচার পাবই।” উল্লেখ্য, চার মাস পর সঞ্জীবের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে গুয়াহাটি হাই কোর্ট।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>