৫০ হাজার বছর পর ফের পৃথিবীর কাছাকাছি, রাতের আকাশ রাঙাল সবুজ ছটার ধূমকেতু

৫০ হাজার বছর পর ফের পৃথিবীর কাছাকাছি, রাতের আকাশ রাঙাল সবুজ ছটার ধূমকেতু

কলকাতা:  আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগের কথা৷ তখন প্রস্তর যুগ৷ রাতের আকাশে উঁকি দিয়েছিল সবুজের ছটামাখা একটি ধূমকেতু। মাঝে কেটে গিয়েছে এতগুলো বছর৷ সম্প্রতি পৃথিবীর কাছে এল সে। রাতের আকাশে ধরা পড়ল সবুজ রঙা সেই ধূমকেতুর যাত্রা। এমনটাই জানালেন জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন- মহাকাশে মিলল ১২টি নতুন চাঁদের হদিশ! শনিকে হারিয়ে আরও বড় এবার বৃহস্পতির পরিবার

এই ধূমকেতুটির পোশাকি নাম, সি/২০২২ ই৩ (জেডটিএফ)। জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের দাবি, প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর কাছে এসেছিল সেটি। এতগুলো বছর পর  ফের দেখা মিলল তার। উত্তর গোলার্ধে রাতের আকাশ আলো হল সবুজের ছোঁয়ায়। যদিও এর অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল গত বছর মার্চ মাসে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় সান দিয়েগো কাউন্টিতে ‘পালোমার অবজারভেটরি’ থেকে গত মার্চ মাসে ওই ধূমকেতুটিকে দেখতে পেয়েছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। জেডটিএফ বা জুইকি ট্রান্সিয়েন্ট ফেসিলিটির সার্ভে ক্যামেরায় চোখ রেখে এই ধুমকেতুর দেখা পেয়েছিলেন তাঁরা। 

কিন্তু এত বছর পর কেন দেখা মিলল জেডটিএফ-এর? ‘প্ল্যানেটারি সোস্যাইটি’ নামে আমেরিকার একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, ধূমকেতুটি সৌরজগতের বাইরের দিক ছুঁয়ে যাচ্ছিল। সে কারণেই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে এত দীর্ঘ সময় লেগেছে৷ 

অস্টিনের সংস্থা ‘আর্থস্কাই’ জানাচ্ছে, পৃথিবীর খুব কাছে এলেও ওই ধূমকেতুটির দূরত্ব থাকবে ৪.২ কোটি কিলোমিটার থেকে ৪.৪ কোটি কিলোমিটার।  প্রস্তর যুগের পর এই প্রথম পৃথিবীর কাছাকাছি এলেও চাঁদের থেকে তা ১০০ গুণ বেশি দূরত্বে থাকবে৷ 

সম্প্রতি ধূমকেতুটি ধরা পড়েছে ইটালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিয়ানলুকা মাসির নজরে। সে দেশের ‘বেলাট্রিক্স অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অব়জারভেটরি’ থেকে ওই ধূমকেতুটিকে দেখতে পান তিনি।  মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’-কে মাসি জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছ দিয়ে গিয়েছে ওই ওই ধূমকেতুটি। সে সময় পৃথিবী থেকে এর অবস্থান ছিল ৪.২ কোটি কিলোমিটার দূরে৷ 

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পোলারিস বা ধ্রুবতারার কাছ দিয়ে যখন এই ধূমকেতুটি ঘুরছিল, তখন সেটিকে দেখে মনে হচ্ছিল, একটা হালকা সবুজ আভা যেন অস্পষ্ট ভাবে চলে গিয়েছে। ধূমকেতুর গা থেকে এমনিতে বিভিন্ন রঙের আলো বিচ্ছুরিত হতে দেখা যায়। রাসায়নিক কারণ তো রয়েইছে, তাছাড়াও কক্ষপথের অবস্থানভেদে এমনটা হয় বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মত।

ধূমকেতুকে তার ‘লেজ’ দিয়ে তারাদের থেকে আলাদা করা যেতে পারে। আকাশে ঘোরাফেরার সময় ধূমকেতুর পিছনে থাকে ধুলোর ‘লেজ’৷ যা তারাদের থাকে না৷ সেই লেজে বিভিন্ন কণা যেন জ্বলন্ত অবস্থায় থাকে।
 

সম্প্রতি নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার পড়ুয়া ইমরান সুলতান এই ধূমকেতুটিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ১৯ জানুয়ারি থেকে ওই ধূমকেতুটির উপর নজর রেখেছেন তিনি।  নিজেকে অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলে দাবি করা ইমরান জানান, ধূমকেতুর অ্যান্টি-টেল বা লেজের মতো অংশের বিপরীত অংশের ছবি তুলতে পেরেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘মহাবিশ্ব যে কতটা সুবিশাল, তা লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকা আমাদের এই অতিথি বুঝিয়ে দিয়েছে।’’