তালিবানি ফতোয়া, আফগানিস্তানে নিষিদ্ধ গর্ভনিরোধক! ফের নিশানায় নারী

তালিবানি ফতোয়া, আফগানিস্তানে নিষিদ্ধ গর্ভনিরোধক! ফের নিশানায় নারী

কাবুল: নতুন করে ক্ষমতা দখলের পর, আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে নিজেদের পাল্টে যাওয়া ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল তালিবানরা৷ বোঝাতে চেয়েছিল, তারা বদলে ফেলেছে নিজেদের খোলনলচে৷ কিন্তু, বাস্তব ততটাই রূঢ়৷ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মহিলাদের উপর চাপানো হচ্ছে একের পর এক ফতোয়া৷ ইতিমধ্যেই মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এবার ফতোয়া জারি গর্ভনিরোধোকে৷ সে দেশে আর জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ বিক্রি করা যাবে না৷ আফগানিস্তানজুড়ে গর্ভনিরোধকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তালিবানরা। তাদের দাবি, ‘‘গর্ভনিরোধকের ব্যবহার আসলে পশ্চিমী ষড়যন্ত্র।’’ কারণ, বিদেশি শক্তি চায় না মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাক৷ 

আরও পড়ুন- ভূমিকম্পের ১১ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার ঘানার প্রাক্তন ফুটবলারের দেহ

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আফগানিস্তানের প্রধান দু’টি শহরে আপাতত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালিবান সেনা। সেখানকার ওষুধ ব্যবসায়ীদের রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুরু হয়েছে প্রচার৷ মহিলাদের বলে আস হচ্ছে গর্ভনিরোধকের ব্যবহার একেবারেই চলবে না। ইতিমধ্যে কাবুল এবং মাজার-ই-শরিফ শহরে যত ওষুধ দোকান রয়েছে,  সব কটি দোকান থেকে গর্ভনিরোধক বড়ি, নিরোধ, ইঞ্জেকশন ইত্যাদি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নতুন করে য গর্ভনিরোধক সংক্রান্ত আর কোনও জিনিস যাতে আনা না হয়,  সেই হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে৷ আর তালিবানি শাসনে নিষেধ আমান্য করলে কী শাস্তি পেতে হয়, তা কারও অজানা নয়৷ কাবুল ও মজর-ই-শরিফের ওষুধের দোকানদাররা এদিন সংবাদমাধ্যম গার্জিয়ানকে জানান, ফতোয়া জারির পর আগামী মাসের জন্য নতুন করে কোনও জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ির অর্ডার করেননি তাঁরা৷ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাবুলের এক ওষুধ ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমার দোকানে দু-দু’বার তালিবান সেনা এসেছিল। বন্দুক ঠেকিয়ে শাসিয়ে গিয়েছে৷ বলেছে, একটিও গর্ভনিরোধক ওষুধ যেন দোকানে না থাকে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওঁরা রুটিন করে কাবুলের প্রতিটি ওষুধের দোকানে ঢু দিচ্ছে। নজর রাখছে কোথাও কোনও গর্ভনিরোধক বিক্রি হচ্ছে কি না।’’ এক মধ্যবয়স্কা মহিলা আবার জানান, তালিবান সেনারা তাঁর বাড়ি বয়ে ‘সাবধান’ করে গিয়েছে৷ তাদের হুঁশিয়া, ‘‘বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারব না। আমাকে ওরা বলেছে, আর এই পশ্চিমি ষড়যন্ত্রের জিনিস ব্যবহার করবেন না। অন্যদেরও ব্যবহার করতে দেবেন না।’’

যদিও আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এখনও পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনও লিখিত নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। তালিবানি সেনারা জানাচ্ছে, তাঁরা এই নির্দেশ দিয়েছে। এই হুকুম সকলকে মান্য করতে হবে৷ 

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরতেই ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে কাবুল দখল নেয় তালিবান৷ সেই থেকে মহিলাদের বিরুদ্ধে একের পর এক এক ফরমান জারি করে চলেছে বন্দুকধারী সরকার। মহিলাদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের স্কুল-কলেজে যাওয়া নিষিদ্ধ। মহিলাদের চাকরি থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আফগানিস্তানের বিভিন্ন দফতরে যে মহিলারা চাকরি করতেন, যেই সব মহিলারা ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ বার একেবারে গর্ভনিরোধক নিষিদ্ধ করে বসল তালিবান সেনা৷ 

তথ্য বলছে, প্রতি ১৪ জন আফগান মহিলার মধ্যে এক জনের মহিলার প্রসবকালীন মৃত্যু হয়। প্রসবকালীন মৃত্যুর পরিসংখ্যানে বিশ্বের মধ্যে ‘বিপজ্জনক দেশ’ বলেও পরিচিত কাবুলিয়াওলার দেশ৷