ওয়াশিংটন: সকলের নজর এড়িয়ে অতি সন্তর্পণে সোমবার যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে পৌঁছন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ তাঁর এই সফরের কথা কাকপক্ষীও টের পায়নি৷ জানা গিয়েছে, রবিবার ভোর ৪টে নাগাদ সংবাদমাধ্যমের নজর এড়িয়ে আমেরিকার বায়ুসেনার একটি বোয়িং ৭৫৭ বিমানে চড়ে ইউক্রেনের উদ্দেশে পাড়ি দেন জো বাইডেন৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই নিরাপত্তা কর্মী, চিকিৎসকদের একটি ছোট দল, ঘনিষ্ঠ কয়েক জন উপদেষ্টা এবং দু’জন সাংবাদিক।
আরও পড়ুন- ফের থরথর করে কেঁপে উঠল তুরস্কের মাটি, ফিরল অভিশপ্ত সোমবার
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় এক বছরের মাথায় এই প্রথম কিয়েভ সফরে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই কিয়েভে আকস্মিক সফরে যান বাইডেন। সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি৷ আমেরিকার ৮০ বছরের ডেমোক্র্যাটিক নেতা বলেন, পুতিন মনে করছিলেন ইউক্রেন দুর্বল এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব না। ইউক্রেনের পাশে থাকব না৷ তিনি ভেবেছিলেন আমরা ন্যাটোকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ব্যর্থ হব৷ কিন্তু উনি ভুল ছিলেন৷
বাইডেন আরও বলেন, ‘‘পুতিনের বিশ্বাস ছিল তিনি আমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারবেন। আমার মনে হয় না, তিনি এখনও এমনটা ভাবছেন। ওঁর ভাবনা চিন্তা সম্পূর্ণই ভুল ছিল। এক বছর পর এর প্রমাণ এই কক্ষে সকলের সামনে। আজ আমরা এখানে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি।’’
বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, কিয়েভ সফরে আসা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দূরপাল্লার অস্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়, শীঘ্রই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার কথা ঘোষণা করবেন জো বাইডেন। এই উত্তেজনার আবহে বাইডেনের কিয়েভ সফর মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমী দুনিয়ার উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেই কূটনৈতিক মহলের অভিমত।
এদিকে চিন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে ব্লিঙ্কেন বলেন, চিনা কোম্পানিগুলি রাশিয়াকে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে জানানো হচ্ছিল। কিন্তু, এখন জানা যাচ্ছে, বেজিং মস্কোকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে। রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করা হলে তা চিনের জন্য ‘মারাত্মক পরিণতি’ বয়ে আনবে বলেও সতর্ক করেছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। চিনের অবশ্য দাবি, রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের কোনও অনুরোধ তারা পায়নি৷
রাশিয়া ও ইউক্রেনের এই সংঘাত ভৌগোলিক দিক থেকে শুরু হলেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইউরোপ থেকে আমেরিকা পর্যন্ত তা ছাড়িয়ে পড়েছে। প্রায় বছর পার হতে চললেও যুদ্ধ বন্ধের কোনও ইঙ্গিত এখনও মেলেনি৷ বরং ইউক্রেনের হয়ে পরোক্ষভাবে লড়ে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমী বিশ্ব।
ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের সম্ভাবনা থেকে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ থেকেই গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়া। যুদ্ধে সমর্থন আদায়ের জন্য চিন, তুরস্ক ও ইরানের দিকে ঝুঁকছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোট।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক পরাজয় ‘অনিবার্য’ বলে মন্তব্য করেছেন সে দেশের কারাবন্দী বিরোধী রাজনৈতিক নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি। এমনকি মস্কো যদি ইউক্রেনে আরও সৈন্য পাঠায়, তারপরও পতন ঠেকানো যাবে না বলে দাবি তাঁর৷ ৪৬ বছর বয়সী রাশিয়ার এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে৷ ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তবে ক্রেমলিনকে চ্যালেঞ্জ করায় তাঁকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে বলেই নাভালনির সমর্থকরা দাবি করেন৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>