কলকাতা: তাঁর কন্ঠে ছিল গভীর আবেগ৷ ভালোবাসা ভরা সেই সুর স্তব্ধ হয়ে গেল এক লহমায়৷ সারা জীবন গান নিয়ে বেঁচে থাকা কৃষ্ণকুমার কুনাথ ওরফে কেকে চলে গেলেন গানের মঞ্চ থেকেই৷ রেখে গেলেন শৈশবের ভালোবাসাকে৷
আরও পড়ুন- প্রিয় গায়ককে গান স্যালুটে বিদায় জানাল কলকাতা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন মুখ্যমন্ত্রীর
হিন্দি রোম্যান্টিক গানের প্লে লিস্ট ছিল তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ৷ তাঁর গলায় জীবন্ত হয়ে উঠত ভালোবাসার গান৷ সেই কেকে-র ব্যক্তিগত জীবনও ছিল প্রেমময়৷ কিন্তু, কৈশরের ভালোবাসাকে নিজের করে পেতে এক সময় তাঁকে ছাড়তে হয়েছিল জীবনের আরেক ‘ভালোবাসা’ তাঁর গানকে৷ গান ছেড়ে নিয়েছিলেন সেলসের চাকরি৷ তবে তা বেশি দিনের জন্য নয়৷ মাত্র ৩ মাস সেই চাকরি করেছিলেন তিনি৷ ফের ফিরে গিয়েছিলেন সঙ্গীতের জগতে৷ শুরু হয়েছিল বলিউডে পথ চলা৷
কেকে এবং জ্যোতি লক্ষ্মী কৃষ্ণার স্বপ্নময় প্রেমের গল্প যেন কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য। তাঁদের নিখুঁত সম্পর্ক এবং সুখী দাম্পত্যে অনেকেই অনুপ্রাণিত করে৷ অনেকেই বলেন, কেকে-র এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে জ্যোতির অটুট প্রেম৷ তবে বিয়ের আগে জ্যোতির বাবা-মা একটি শর্ত রেখেছিলেন কেকে-সামনে৷ বলেছিলেন, বিয়ে করতে হলে আগে তাঁকে চাকরি করতে হবে৷ কারণ তখনও কৃষ্ণকুমার কুনাথ থেকে কেকে হয়ে ওঠেননি তিনি৷ সেই সময় তিনি বেকার৷
দীর্ঘ দিনের প্রেমিকাকে কোনও মূল্যেই হারাতে চাননি কেকে৷ টিনএজ সুইটহার্টকে বিয়ে করার জন্য সেই শর্ত মাথা পেতে নেন৷ হ্যাঁ, যে মানুষটি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মঞ্চ মাতিয়ে গিয়েছেন, আদ্যোপান্ত গান নিয়ে বেঁচেছেন, সেই মানুষটিই জ্যোতিকে পাওয়ার জন্য দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন গানকে৷ অবশেষে ১৯৯১ সালে জ্যোতি লক্ষ্মী কৃষ্ণাকে বিয়ে করেন কেকে৷ তখনও বলিউডে সাম্রাজ্য বিস্তার হয়নি তাঁর৷ ১৯৯৯ সালে রিলিজ হয় কেকে-র প্রথম অ্যালবাম ‘পল’৷ দুই দশক পরেও সেই গানের নেশায় ডুবে ৮ থেকে ৮০৷ এর পর অবশ্য আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে৷ মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে সেই অ্যালবামেরই গান ছিল তাঁর গাওয়া শেষ গান৷
জ্যোতি পেশায় একজন চিত্রশিল্পী৷ তাঁর নিজস্ব একটি ওয়াবসাইট রয়েছে৷ সেখানে উঁকি দিলেই দেখা যাবে তাঁর অদ্ভূত সব সৃষ্টি৷ রঙিন ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে তাঁর কারিকুরি৷ ক্যানভাসে নিজের কল্পনাকে ফুটিয়ে তুলতে তিনি পারদর্শী৷
১৯৬৮ সালের ২৩ অগাস্ট কেরালায় থ্রিশুরে জন্ম কৃষ্ণকুমার কুনাথের৷ বাবার সিএস মেন ও মা কণকাভল্লি দু’জনেই দক্ষিণ ভারতীয়। তবে কেকে-র ছোট বেলা কেটেছে দিল্লিতে। সেখানেই তাঁর পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা, সঙ্গীত চর্চা। ছোট বেলা থেকেই স্টেজ শো করতেন তিনি। অন্যদিকে, বাবা মা দক্ষিণী হলেও ১৯৬৭ সালে দিল্লিতে জন্ম জ্যোতির৷ কেকে আর জ্যোতির প্রেম ছিল শিল্পীর গানের মতোই সুরেলা৷ সম্পর্কের স্নিগ্ধতা সকলকে অনুপ্রাণিত করত৷ মঙ্গলবার রাতে খবরটা পাওয়ার পর বিশ্বাস করতে পারেননি জ্যোতি ও তাঁদের দুই সন্তান৷ তাঁরা এখনও মাতে পারছেন না যে, সকলকে একা ফেলে কেকে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>