এই বছর ফের ফিরছে এল নিনো, ২০১৫-র মতো প্রবল গরম ও কম বৃষ্টির সম্ভাবনা! বাড়ছে আতঙ্ক

এই বছর ফের ফিরছে এল নিনো, ২০১৫-র মতো প্রবল গরম ও কম বৃষ্টির সম্ভাবনা! বাড়ছে আতঙ্ক

নয়াদিল্লি:  ফেরে বিশ্বজুড়ে এল নিনো আতঙ্ক। এর প্রভাবে গোটা বিশ্বের তাপমাত্রায় বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এল নিনো এলে প্রভাব পড়বে ভারতেও। এর প্রভাবেই চলতি বছর বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর বৃষ্টি কম হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষিকাজ। ফলে খুব বেশি করে সমস্যায় পড়বেন কৃষিজীবিরা। শুধু তাই নয়, বাজারে জোগানের অভাবে দাম বাড়বে খাদ্যপণ্যের। এল নিনোর প্রভাবে বাড়বে তাপমাত্রাও৷ জানুয়ারি মাসের অর্থনৈতিক পরিচালনায় এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু এই এল নিনো কী? চলুন দেখা যাক-

আরও পড়ুন- ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিকে কেন সাহায্য করছে চিন? উদ্বেগে ওয়াশিংটন

এল নিনো হল একটি স্প্যানিশ শব্দ৷ এর অর্থ ছোট্ট বালক বা যীশুর সন্তান। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পেরু ইকুয়েডর উপকূল বরাবর কোনও কোনও বছর ডিসেম্বর মাসে এক প্রকার দক্ষিণ মুখী উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়, তাকেই বলে এল নিনো৷ গড়ে প্রায় ৪ বছর অন্তর এল নিনো আসে।

কিন্তু একে যীশুর ছেলে বলা হয় কেন?  কারণ সাধারণত বড়দিনের পর, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেই এই দেখা মেলে। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে এনসো চক্রের দু’টি বিপরীত অবস্থা রয়েছে৷ একটি হল এল নিনো এবং অপরটি লা নিনা। লা নিনা দ্বারা এনসো ইভেনের শীতল অবস্থা এবং এল নিনো দ্বারা উষ্ণ অবস্থা বোঝানো হয়।

 উষ্ণ এল নিনোর আগমনের ফলে শীতল উত্তর মুখী পেরু স্রোতের ঊর্ধ্বগমন বাধাপ্রাপ্ত হয়। যার ফলে সেই অঞ্চলের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হয়, উদ্ভিদ প্লাংটনের পরিমান হ্রাস পায়৷  মাছের উৎপাদন কমে যায়৷ এর ফলে পেরু, ইকুয়েডর ও উত্তর চিলির ধীবররা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

এল নিনোর সঙ্গে মৌসুমী বায়ুর কিন্তু গভীর সম্পর্ক আছে৷ তার আগে দেখে নেওয়া যাক সাধারণ অবস্থায় কী হয়-

১. এই সময়ে উত্তর অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিকটবর্তী অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূলে উচ্চচাপ থাকে। বায়ু উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের অভিমুখে যাত্রা করে।

২. ভারত মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী মহাসাগরগুলির তুলনায় এর জল গরম থাকে। ফলে তুলনামূলকভাবে কম চাপ থাকে এই অঞ্চলে। স্বাভাবিক নিয়মেই আর্দ্র বাতাস পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের থেকে ভারত মহাসাগরের দিকে ছুটে চলে যায়।

৩.ভারত মহাসাগরের তুলনায় ভারতের স্থলভাগের উপর চাপ কম থাকে। আর্দ্রতা-ভরা বাতাস সমুদ্র থেকে স্থলভাগে চলে যায় এবং বৃষ্টি হয়।

এল নিনোর প্রভাবে কী হয়?

এল নিনো যে বছরে আসে, সেই বছর পেরুর উপকূলে সমুদ্র পৃষ্ঠ শীতল হওয়ার বদলে উষ্ণ হয়ে যায়। জল গরম হয়ে উঠলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।  বায়ু উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে যাত্রা করে। আর্দ্রতা-বোঝাই বাতাস পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে পেরুর উপকূলের দিকে ছুটে আসে। ফলে এল নিনোর বছরে পেরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়।

একই সময়ে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে এবং এশিয়ার বাইরের জলভাগ শীতল হয়ে পড়ে। এর ফলে ভারত মহাসাগর, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ চাপ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে এল নিনোর বছরে ভারতে মৌসুমী বায়ুর দ্বারা বৃষ্টিপাত অনেকটাই হ্রাস পায়। এর আগে ২০১৫ সালে এল নিনোর দাপটে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। সেই সময় থেকেই চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে এল নিনো৷ অর্থাৎ, একথা স্পষ্ট যে, এল নিনো এলে, ২০২৩ সালেও অতিরিক্ত গরম পড়বে৷ গ্রীষ্ণের প্রভাব দীর্ঘ হবে এবং বর্ষায় তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।