শুক্রাণুর ঘনত্ব ও সংখ্যা কমছে হু-হু করে, প্রজনন ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগে বিজ্ঞানীরা

শুক্রাণুর ঘনত্ব ও সংখ্যা কমছে হু-হু করে, প্রজনন ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগে বিজ্ঞানীরা

41d99dc4bc10e96a0f4f439e09843fa5

কলকাতা: বিশ্বে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মাঝেই নতুন উদ্বেগে রাষ্ট্রসঙ্ঘ৷ আর এই উদ্বেগ পৃথিবীতে ঘটতে চলা প্রজননজনিত সমস্যা!

আরও পড়ুন- প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঠোঁট পুরুর নেশায় মত্ত তরুণী, কৃত্রিম স্তন বসাতে গিয়ে মারণরোগের হদিশ, বাঁচল জীবন

গত ১৫ নভেম্বর বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটিতে পৌঁছেছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নয়, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কিত অন্য একটি বিষয় নিয়ে। আর তাঁদের চিন্তার বিষয় হল প্রজননজনিত সমস্যা। এর জন্য বিশেষজ্ঞরা কিন্তু, মহিলাদের পিসিওডি ও অন্যান্য প্রজননজনিত জটিলতা অথবা সমস্যাকে দায়ী করছেন না। বরং তাঁরা উদ্বিগ্ন বিশ্বজুড়ে পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ও তার ঘনত্ব হ্রাস পাওয়া নিয়ে৷ একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সারা বিশ্বেই পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা দ্রুত গতিতে হ্রাস পাচ্ছে৷ এর ফলে পৃথিবীর প্রজনন স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হতে পারে৷ 

২০১৭ সালে একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, গত চার দশকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুক্রাণুর সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। তবে ওই গবেষণার ফলাফল সীমাবদ্ধ ছিল ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের পুরুষদের মধ্যেই৷ ‘হিউম্যান রিপ্রোডাকশন আপডেট’ জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় ৫৩টি দেশের ৫৭,০০০ পুরুষের উপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এটি এখনও পর্যন্ত হওয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমীক্ষা যেখানে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও ঘনত্ব পরীক্ষা করা হয়েছে।

ওই গবেষণা ফল দেখে চমকে উঠেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই উদ্বেগের অন্যতম কারণ হল ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পুরুষদের প্রতি মিলিমিটার সিমেন অর্থাৎ বীর্যে শুক্রাণুর ঘনত্ব ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। ১৯৭৩ সালে প্রজননে সক্ষম পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর ঘনত্ব (প্রতি মিলিমিটার বীর্যে) যেখানে ছিল ১০ কোটি ১২ লক্ষ, সেখানে ২০১৮ সালে সেই ঘনত্বের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯০ লক্ষে৷ অর্থাৎ হিসেব অনুযায়ী এই ৪৫ বছরে, প্রতি মিলিমিটার সিমেনে শুক্রাণুর ঘনত্ব ৫১ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে৷ 

ওই একই সময়ের মধ্যে আবার মোট শুক্রাণুর সংখ্যা কমেছে ৬২.৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি বছর ১.১৬ শতাংশ করে কমছে শুক্রাণুর ঘনত্ব। ২০০০ সালের পর তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শুক্রাণু সংখ্যা হ্রাসের হার প্রতি বছর দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। ২.৬৪ শতাংশ করে কমছে শুক্রাণুর ঘনত্ব। পাশাপাশি দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর স্পার্ম কাউন্ট প্রায় ১.১ শতাংশ হারে কমে যাচ্ছে। ফলে পুরুষদের মধ্যে  শুক্রাণুর সংখ্যা ও ঘনত্ব—দুই-ই যে হ্রাস পাচ্ছে, তা স্পষ্ট৷ যার প্রভাব সরাসরি পড়তে চলেছে প্রজনন স্বাস্থ্যের উপরে।