কলকাতা: প্রায় তিন বছর আগে একটা ভাইরাস লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল মানুষের স্বাভাবিক জীবন৷ তাল কেটেছিল চেনা ছন্দের৷ এর পর যখনই পরিস্থিতি কিছুটা থিতু হয়েছে, তখনই নতুন রূপ নিয়ে ফিরে এসেছে মারণ করোনা ভাইরাস৷ কেড়েছে অসংখ্য প্রাণ৷ তবে গত কয়েক মাসে অনেকটাই কমেছিল করোনার প্রকোপ৷ ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছিল গোটা দুনিয়া৷ কিন্তু, কোভিড এখনও কাটেনি৷ নকুন করে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে করোনা ভাইরাস৷ এর আগে আল্ফা, বিটা, ডেল্টা থেকে ওমিক্রন, বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে করোনা৷ এবার করোনার আরও একরূপের সম্মুখীন গোটা দুনিয়া। এটির নাম ওমিক্রন BF.7। চিনে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস।
আরও পড়ুন- কোভিডে আক্রান্ত ১০ কোটিরও বেশি, মৃত্যুও বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক এই দেশে
কী এই ওমিক্রন BF.7? কতটাই বা আতঙ্কের? BF.7 ওমিক্রনের আসল নাম BA.5.2.1.7। সংক্ষেপে এটিকে বলা হচ্ছে BF.7৷ এটি ওমিক্রন BA.5-এর একটি অংশ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম এই ভাইরাস৷ যাঁদের টিকা নেওয়া আছে, তাঁরাও এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন বলে আশঙ্কার করা হচ্ছে৷
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ভাইরাসের প্রজনন ক্ষমতা ১০ থেকে ১৮.৬৷ অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি ওমিক্রনের এই রূপে সংক্রমিত হলে, তাঁর থেকে ১০ থেকে ১৮.৬ জন সংক্রমিত হতে পারেন। ওমিক্রনের নয়া রূপের সঙ্গে পুরনো ওমিক্রনের উপসর্গগুলির মিল রয়েছে৷ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, ক্লান্তি, বমি, ডায়েরিয়া এর অন্যতম লক্ষণ। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম, তাঁরা ওমিক্রনের নয়া প্রজাতিতে আক্রান্ত হলে আরও দুর্বল হয়ে পড়বেন৷ চিনে ব্যাপকভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার পেরিয়ে গিয়েছে৷
‘সেল হোস্ট অ্যান্ড মাইক্রোব’ সায়েন্স জার্নালে ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওমিক্রনের বাকি প্রজাতিগুলোর চেয়ে BF.7 ৪.৪ গুণ বেশি সংক্রামক। সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় হল, ওমিক্রনের এই উপপ্রজাতি বা সাব-ভ্যারিয়্যান্ট সহজে ভ্যাকসিন দিয়ে কাবু হবে না। মানুষের শরীরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে BF.7৷ শরীরের শ্বেত রক্তকণিকার প্রতিরোধ শক্তিকেও ভেঙে দিতে পারবে অল্পদিনের মধ্যেই। ফলে শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও সহজে নিকেশ করা যাবে না ওমিক্রনের এই প্রজাতিকে।
ওমিক্রনের দুই উপপ্রজাতি বিএ৪ ও বিএ৫ নিয়ে এক সময় বেশ শোরগোল পড়েছিল৷ এই দুই স্ট্রেনের দাপটে আমেরিকা ও ইউরোপে সংক্রমণের হার বিপদসীমার উপরে পৌঁছেছিল৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনের নতুন উপপ্রজাতি BF.7 আরও বেশি সংক্রামক৷ এই ভাইরাসে শুধু চিনই কাবু নয়, গত অক্টোবরে আমেরিকায় ৫% এবং ব্রিটেনে ৭.২৬% সংক্রমণ বাড়ার পিছনে ছিল BF.7৷
ওমিক্রন এমনিতেও ৩০ বার জিনের গঠন বদলেছে। ফলে এই ভ্যারিয়েন্ট যে খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়াবে, তা স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, ভাইরাসের এই প্রজাতিতে প্রোটিনের বিন্যাস এমনভাবে বদলে গিয়েছে যে রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর টেস্টকেও ফাঁকি দিতে পারবে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>