IPCC রিপোর্টে উদ্বেগ, উষ্ণায়ন মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপের বার্তা রিপোর্টে

IPCC রিপোর্টে উদ্বেগ, উষ্ণায়ন মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপের বার্তা রিপোর্টে

কলকাতা: বর্তমান বিশ্বে এক জলন্ত সংকট হল বিশ্ব উষ্ণায়ন৷ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে বৈশ্বিক উষ্ণতা৷ এই সমস্যা শুধু পরিবেশগত নয়, এর প্রভাব পড়েছে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের উপরেও৷ বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে গোটা পৃথিবী যখন চরম উদ্বেগে, তখন এল চূড়ান্ত সতর্কবার্তা! গতকাল প্রকাশিত আইপিসিসি-র রিপোর্টে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিশ্ব৷ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে ভাবে গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী এক দশকের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির হার পেরোতে পারে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের হার আরও দ্রুত হয়ে যাবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে গোটা বাস্তুতন্ত্রের উপরে। অবিলম্বে পদক্ষেপ করা না গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে আইপিসিসি-র প্রকাশিত ‘সিন্থেসিস’ রিপোর্টে। 

আরও পড়ুন- আয়তনে লন্ডন শহরের চেয়েও বড়! আন্টার্কটিকায় ভাঙল প্রকান্ড হিমশৈল

ওই রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আশু সংকট থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে দ্রুত ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে হবে৷ প্রকৃতিকে এই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্বের সমস্ত দেশকে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা অর্ধেক এবং ২০৫০-এর মধ্যে তাকে শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷ 

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের কথায়, “পাতলা বরফের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মানবসভ্যতা। দ্রুত গলে যাচ্ছে বরফের সেই আস্তরণ৷ তাই গোটা বিশ্ব জুড়ে পরিবেশগত পদক্ষেপ প্রয়োজন।” বর্তমান পরিস্থতিকে ‘টাইমবম্ব’-এর সঙ্গেও তুলনা করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব৷ আইপিসিসি-র নয়া রিপোর্টে ওই ‘বম্ব’ নিস্ক্রিয় করারই দাওয়া দেওয়া হয়েছে৷ 

প্রসঙ্গত, সপ্তাহব্যাপী বৈঠকের পরে ১৯৫টি দেশের অনুমোদনক্রমে প্রকাশিত হয়েছে আইপিসিসি-র এই ‘সিন্থেসিস’ রিপোর্ট। ক্রমশ তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই প্রভাব অনুভূত হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। অবিলম্বে পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে, আগামিদিনে তাপপ্রবাহের জেরে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। দেখা দিতে পারে খাদ্য ও জলসঙ্কট। যার পরিণতি দুর্ভিক্ষ৷ বিপুল পরিমাণে বরফ গলার ফলে বাড়তে পারে সমুদ্রের জলস্তরও।

সাধারণত  সূর্য থেকে পৃথিবীতে যে তাপ এসে পৌঁছায় তার প্রায় বেশির ভাগ অংশই পৃথিবী থেকে পার্থিব বিকিরণ রূপে মহাশূন্যে ফিরে যায়৷ এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে। বায়ুমণ্ডলীয় কিছু গ্যাস রয়েছে যা পার্থিব বিকিরনের কিছু পরিমাণ তাপ শোষণ করে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তোলে। এই গ্যাসগুলিকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়ে থাকে। গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান গ্যাস গুলি হল কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, মিথেন, ওজোন ও নাইট্রাস অক্সাইড। পৃথিবীকে কাঁচের ঘরের মতো বেষ্ঠন করে থাকা এই গ্রিন হাউস গ্যাস বিশেষত কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প না থাকলে পৃথিবীর বর্তমান গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি থেকে কমে – ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেত। 

মানুষের কিছু অবিবেচনামূবক কাজের জন্য এই গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাচ্ছে৷ যার ফলে এই গ্যাসগুলির দ্বারা শোষিত তাপের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রার পরিমান বেড়ে গিয়ে ঘটছে বিশ্ব উষ্ণায়ন।