নদিয়া: জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছে সে৷ মাথার উপর বটগাছের সেই ছায়া কোনও দিনই পায়নি৷ তার কাছে মা-ই সব৷ কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর কী ভাবে ছেলেকে মানুষ করবে তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না কল্পনা হালদার৷ ছেলে যে ছোট থেকেই মেধাবী৷ এই অবস্থায় অভাবের তাড়নায় স্বামীর ঘর ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে টুংগী হালদার পাড়ায় বাপেরবাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি৷ সংসার চালাতে ন্যূনতম বেতনে একটি এনজিও-তে চাকরি নেন৷ কিন্তু মাসিক ৩ হাজার টাকায় সংসার চালাতে গিয়ে হমশিম খেতে হয় তাঁকে৷ এদিকে ছেলেকে ভর্তি করেন গ্রামের একটি স্কুলে৷ সেখান থেকে মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুলে৷ সেই ছেলেই মাধ্যমিকে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মধ্যে সর্বাধিক ৬৭৩ নম্বর পেয়ে তাক লাগালেন৷ মাজদিয়া রেল বাজার হাইস্কুলের ছাত্র আকাশ হালদারের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা গ্রাম৷
আরও পড়ুন- বাবার সঙ্গে মাঠে-ঘাটে কাজ, বাড়ি বাড়ি দুধ দিয়েও মাধ্যমিকে তাক লাগালো কিরণ
স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে আকাশের আর্থিক অবস্থার কথা অজানা ছিল না৷ সেই সঙ্গে তাঁরা এটাও জানতেন আকাশ পড়াশোনায় মেধাবী। তাই তার পড়াশোনার বিষয়ে সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আর্থিক অনটনের মধ্যেই পড়াশোনা করা এ বছরের মাধ্যমিকে সবাইকে তাক লাগিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে সর্বাধিক ৬৭৩ নম্বর পেল সে। বিজ্ঞান বিভাগের তিনটি বিষয়েই ১০০-র মধ্যে ১০০ নম্বর পেয়েছে আকাশ। তার কথায়, “স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া এই ফলাফল সম্ভব ছিল না।” একাদশ- দ্বাদশের পাঠও মাজদিয়া রেল বাজার হাইস্কুল থেকেই নিতে চায় ওই পড়ুয়া৷
আকাশের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন মণ্ডল। তিনি বলেন, “আকাশের ফল দেখে আমরা খুবই খুশি। আকাশ এই নম্বর পেয়ে আমাদের স্কুলকে গর্বিত করেছে। যেভাবে কষ্ট করে ও পড়াশোনা করেছে তাতে এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্বই ওর।” অন্যদিকে ছেলের সাফল্যে বাধ মানছে না কল্পনাদেবীর চোখের জল। তিনি বলেন, “সরকার সাহায্য করলে আমি ছেলেকে মানুষ করতে পারব৷’’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>