শঙ্খ ঘোষের প্রতিবাদী কলমের বিরুদ্ধে বেলাগাম অনুব্রত এবার কি ক্ষমা চাইবেন?

শঙ্খ ঘোষের প্রতিবাদী কলমের বিরুদ্ধে বেলাগাম অনুব্রত এবার কি ক্ষমা চাইবেন?

কলকাতা:  বাংলা সাহিত্য জগতকে কাঁদিয়ে আজ ভোরে চির বিদায় নিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ৷ তাঁর প্রয়াণে তৈরি হল এক গভীর শূন্যতা৷ কবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এমনকী রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কথাও জানিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু এক সময় শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন তাঁর দলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল৷ বীরভূমের বেলাগাম সন্ত্রাসে ঝলসে উঠেছিল শঙ্খ ঘোষের কলম৷ প্রকাশ্যে অনুব্রত বলেছিলেন, এ আবার কোন কবি? বলেছিলেন, ‘‘উনি ভুল করেছেন৷ আমি শুধরে দিয়েছি৷’’ আজ তাঁর প্রয়াণে কী বলবেন অনুব্রত? তাঁদের মধ্যে যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল, তার জন্যে কি ক্ষমা চেয়ে নেবেন? নাকি এখনও বলবেন উনি ভুল করেছিলেন…৷ 

আরও পড়ুন- ফের অসুস্থ মদন মিত্র, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হাসপাতালে

পঞ্চায়েত ভোটর আগে যখন বঙ্গ রাজনীতিতে উষ্ণ হাওয়া বইছিল, চলছিল বন্দুকের লড়াই, তখন ‘মুক্ত গণতন্ত্র’ কবিতায় শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘যথার্থ এই বীরভূমি/ উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে এসে/ পেয়েছি শেষ তীরভূমি।/ দেখ্ খুলে তোর তিন নয়ন/ রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে/ দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন’। এর বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়ে অনুব্রত বলেছিলেন, এ কোন কবি উঠে এসেছে, যে আমার উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে৷ এখানেই খান্ত হননি তিনি৷ বলেছিলেন, ‘‘ শঙ্খ পবিত্র জিনিস৷ কিন্তু শঙ্খ ভুল করলে দেবতার অসম্মান হয়৷ তাই ওঁনার নাম শঙ্খ রাখা উচিত হয়নি৷’’ উল্লেখ্য বিষয় হল, সেই সময় অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন খোদ দলনেত্রী৷ যার জেরে সেই সময় আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন বীরভূম জেলার তৃণমূল সভাপতি৷ ক্ষমা চাওয়া তো অনেক দূর৷ কিন্তু শঙ্খ ঘোষ যে উচিত কথাই বলেছিলেন, তা মেনে নিয়েছিলেন বিশিষ্টজনেরা৷ পঞ্চায়েত ভোটের ইতিহাস সাক্ষী থেকেছে চরম হিংসার৷ আজ তাঁর মৃত্যুর পরও কি নিজের ভুল স্বীকার করবেন না অনুব্রত? নাকি এখনও বলবেন, ‘‘উনি ভুল করেছিলেন৷ আমি শুধরে দিয়েছি৷ ’’

আরও পড়ুন- চরম অপদার্থ কেন্দ্রের সরকার, কোভিড ইস্যুতে তুলোধোনা মমতার

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের মে মাসে পঞ্চায়েত ভোটের আগে  অনুব্রত বলেছিলেন, বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে দেখবেন রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর পর বীরভূমের ৪২টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৪১টিতেই বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। এর পরেই গর্জে উঠেছিলেন কবি৷ সেই সময় অনুব্রত সুর উঁচিয়ে  বলেছিলেন, ‘‘বড় বড় কথা বলছেন কবি৷ এ কোন কবি? আমরা তো কবি বলতে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকেই জানতাম। এ কোন কবি উঠে এসেছেন যে, আমার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন!’’ আসলে কবি শঙ্খ ঘোষের লেখার বারবার ফুলে উঠেছে সমাজের বাস্তব রূপ৷ তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রতিটি অন্যায়ের৷ অথচ প্রতিবাদের সেই কণ্ঠকে দমানোর চেষ্টা চলেছে৷ অনুব্রত মণ্ডল শঙ্খ ঘোষের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, “খড়্গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন? দিলীপবাবু যখন বললেন, একশো দেড়শো লোক শ্মশানে যাবে, তখন কি কলমটা বন্ধ হয়ে যায়? যে ভাষায় কবি শঙ্খ ঘোষকে তিনি আক্রমণ শানিয়েছিলেন, সেটাই কী সংস্কৃতি? এর জন্য কি বিন্দুমাত্র লজ্জিত নন তৃণমূল নেতা?     
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − one =