স্বীকৃতি পেয়েছেন তুলসি, এখনও অন্ধকারে ব্রাত্য বাংলার রাধেশ্যাম

স্বীকৃতি পেয়েছেন তুলসি, এখনও অন্ধকারে ব্রাত্য বাংলার রাধেশ্যাম

a99bb53a8e8c688608b4367c76bbbeea

কলকাতা: খালি পা, গায়ে আদিবাসী পোশাক৷ সোমবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের হাত থেকে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার নিলেন পরিবেশবিদ তুলসি গৌড়া৷ যা সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে৷ 

আরও পড়ুন- বজবজে বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল বাড়ির ছাদ, মৃত! তদন্তে পুলিশ

প্রথাগত শিক্ষা নেই তাঁর৷ স্কুল-কলেজের ধারেকাছেও যায়নি কোনও দিন৷ কিন্তু তাঁর জ্ঞানের পরিধি বহু পণ্ডিতকেই হার মানায়৷ গাছগাছালির খুঁটিনাটি তাঁর হাতের মুঠোয়৷ সরকারি স্বীকৃতি মেলার আগেই তাঁর কাজ নজর কেড়েছিল কর্ণাটক সরকারের৷ 

গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে কর্ণাটকের এই উপজাতি মহিলার ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ তবে আমাদের রাজ্যেও এক তুলসি গৌড়া রয়েছেন৷  তাঁর কৃতিত্বও কিছু কম নয়৷ তবে  সকলে তা জানে না৷ তিনি হলেন রাধেশ্যাম গড়াই৷ কয়লাখনি অঞ্চল রানিগঞ্জ থেকে জাতীয় সড়ক ধরে সিউড়ির দিকে ১০ কিলোমিটার গেলেই রয়েছে চিচুরিয়া মোড়৷ সেখান থেকে আরও ৫ কিলোমিটার গেলে আলিনগর গ্রাম। ১৯৮৯ সাল থেকে এই গ্রাম ও লাগোয়া এলাকায় গাছ পুঁতে চলেছেন রাধেশ্যাম৷ 

jangle

গত ৩২ বছরে কতগুলি গাছ বসিয়েছেন জানেন? পাঁচ লক্ষ৷ হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন৷ তাঁর উদ্যোগে গোটা এলাকা পুরোদস্তুর বনভূমির রূপ নিয়েছে৷ গুগল ম্যাপে সেই জঙ্গলের ছবি বেশ স্পষ্ট৷ একটা মানুষ সম্পূর্ণ একার হাতে এই জঙ্গল তৈরি করেছেন৷ না মিলেছে কোনও সরকারি সাহায্য৷ না বেসরকারি৷ পরে অবশ্য তাঁর ছেলে তাঁকে সাহায্য করতেন৷ 

কিন্তু কেন হঠাৎ জঙ্গল বানাতে গেলেন রাধেশ্যাম? তিনি যে অঞ্চলে থাকেন, সেটা এককথায় রুক্ষ৷ পাথুরে জমি৷ গ্রীষ্মে এতটাই তেতে ওঠে যে হাঁটাচলা দায় হয়ে যায়৷ চড়া রোদে তালু ফেটে যায়৷ কী ভাবে স্থানীয় মানুষগুলোকে একটু শান্তি দেওয়া যায় ভাবতে শুরু করেন রাধেশ্যাম৷ তখনই তাঁর মাথায় আসে যদি পতিত জমিগুলিতে গাছ লাগানো যায়! তাহলে তো মানুষগুলো একটু ছায়া পাবে৷ সেই ভাবনা থেকে পথ চলা শুরু৷ 

এক চিলতে ঘরে থাকে রাধেশ্যামের পরিবার৷ প্রতিদিন সকালে লুঙ্গি পরে বেরিয়ে পড়তেন তিনি৷ বউ গামছায় মুড়ি-শশা কিংবা গুড় বেঁধে দিতেন৷ সারাদিন গাছ বসিয়ে ক্লান্ত রাধেশ্যাম সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেন৷ কিন্তু হার মানেননি৷ শুরু হত পরের দিনের পরিকল্পনা৷ এমন ভাবে জঙ্গলের ভিতরে একটি জলাশয়ও তৈরি করেন তিনি৷ তাতে কটা মাছও ছাড়েন৷ এভাবেই তিলে তিলে গড়ে তোলেন তাঁর স্বপ্নের অরণ্য৷ পতিত জমিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন রাধেশ্যাম৷ 

এই পরিশ্রমের ‘পুরুস্কার’ও পেয়েছেন রাধেশ্যাম৷ জানেন কী? একবার বন দপ্তরের কিছু কর্তা এই বনভূমি দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন৷ তারপর তাঁর হাতে তুলে দেন উপহার- একটি লুঙ্গি আর একটি গামছা!

পরে বর্ধমানের একটি বড় ক্লাব রাধেশ্যামকে সম্মান জানিয়েছিল৷ উনি তাতেই খুশি৷ এর পর বেশ কয়েকটি ক্লাব ছোটোখাটো পুরস্কার দিয়েছেন তাঁকে৷ ব্যাস ওই টুকুই৷ তবে রাধেশ্যাম গড়াইয়ের কথা আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিলেন তুলসি গৌড়া৷ কাকতালীয় ভাবে দু’জনের বয়সই ৭২৷ তবে একজন স্বীকৃতি পেলেন৷ একজন রয়ে গেলেন আঁধারেই৷  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *