গত দু’দশকে বাংলায় গণহত্যার বলি ৯১ জন, রামপুরহাট উস্কে দিল সেই ‘অন্ধকার’ স্মৃতি

গত দু’দশকে বাংলায় গণহত্যার বলি ৯১ জন, রামপুরহাট উস্কে দিল সেই ‘অন্ধকার’ স্মৃতি

59bf7e7a2a80a2a5a30fd1e1bab655aa

কলকাতা:  রামপুরহাট গণহত্যার ঘটনা আরও একবার গোটা বাংলাকে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে৷ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের৷ তবে, রাজনৈতিক বিরোধের জেরে রক্তের হোলি খেলা বাংলার বুকে এই প্রথম নয়৷ গত অর্ধ শতকে বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে গণহত্যার মর্মান্তিক খবর৷ লেখা হয়েছে কলঙ্কিত অধ্যায়৷ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে লেগেছে গণহত্যার দাগ৷ বস্তুত, ৭০ এর দশকে সূচনা হয়েছিল এহেন হিংসা আর গণহত্যার রাজনীতির৷ সেই ধারা আজও বহমান৷ গত দুই দশকে গণহত্যার বলি ৯১৷

আরও পড়ুন- দুর্ঘটনা নয়! বগটুই গ্রামে কীভাবে আগুন লাগল জানিয়ে দিল সিট

একুশ শতকে নন্দীগ্রামের ধারাবাহিক হিংসাপর্ব আর দু’দফায় গণহত্যার ঘটনা সাড়া ফেলেছিল আন্তর্জাতিক মহলে। তার কয়েক বছর আগে বীরভূমের নানুর সাক্ষী হয়েছিল এমনই রাজনৈতিক হিংসার। সেই দীর্ঘ তালিকায় নয়া সংযোজন বীরভূমের রামপুরহাট-১ ব্লকের বগটুই গ্রাম। গত ২২ বছরে এমনই কয়েকটি ভয়াবহ রাজনৈতিক গণহত্যার ঘটনার উল্লেখ রইল। 

২৭ জুলাই ২০০০- বীরভূমের নানুর-সূচপুরের ঘটনা৷ একটি বিতর্কিত জমিতে চাষ করতে যাওয়ার সময় বেপরোয়া হামলা চালানো হয় তৃণমূল সমর্থকদের উপর৷ মৃত্যু হয় ১১ জনের৷ নিহত সকল ক্ষেতমজুরই ছিলেন তৃণমূলের সমর্থক৷ এই ঘটনায় অভিযুক্ত তদানীন্তন বাম সরকার৷ 

৪ জানুয়ারি ২০০১- ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ছোট আঙারিয়া গ্রাম৷ তৃণমূল সহ বাম বিরোধী দলগুলির গোপন বৈঠক চলার সময় তাদের উপর হামলা চালানো হয়৷ এই ঘটনায় মৃত্যু হয় ১১ জনের৷ এক্ষেত্রেও অভিযুক্ত সেই সিপিএম৷ 

১৪ মার্চ ২০০৭- পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম৷ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মুক্তাঞ্চল দখলের সময় পুলিশি অভিযানে চলে বেপরোয়া গুলি ও বোমা বর্ষণ৷ মৃত্যু হয় ১৪ জনের৷ অভিযোগ, পুলিশের উর্দি পরে খুন ও ধর্ষণ করেন সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা৷ প্রাণ হারান ১৪ জন৷

১০ নভেম্বর ২০০৭- আবারও শিরোনামে উঠে আসে সেই নন্দীগ্রাম৷ আরও একবার ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা৷ এর ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন গ্রাম দুনর্দখলের জন্য শুরু হয় সূর্যোদয়’ অভিযানে ফের ঝরে রক্ত৷ ওই দিন মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের৷ 

৭ জানুয়ারি ২০১১- রক্ত ঝরা অধ্যায় নিয়ে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে ঝাড়গ্রামের নেতাই৷ মাওবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়িতে বসেছিল সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের শিবির৷ এর প্রতিবাদ জানান গ্রামবাসীরা৷ প্রতিবাদীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা৷ মৃত্যু হয় ১৪ জনের৷

 
২০০৩, ২০০৮ এবং ২০১৩-
তিনটি পৃথক সাল৷ কিন্তু ঘটনাস্থল এক৷ মুর্শিদাবাদের ডোমকল৷ এই অঞ্চলটি অবশ্য বরাবরই রাজনৈতিক হিংসাদীর্ণ বলে পরিচিত৷ পঞ্চায়েত ভোটে এখানে বারে বারে  রক্ত ঝরেছে৷ সংঘর্ষে জড়িয়েছে কংগ্রেস-সিপিএম৷ ওই তিন বছর মিলিয়ে ডোমকলে গণহত্যার বলি মোট ৩৭৷ 

২১ মার্চ ২০২২- খুন হন বীরভূমের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকেরবড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ৷ এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বগটুই গ্রাম৷ পর পর বাড়িতে অগ্নি সংযোগ৷ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ৮ জনের৷