WBCS অফিসার থেকে হাই কোর্টের বিচারপতি, কী ভাবে মোড় পাল্টাল জীবনের?

WBCS অফিসার থেকে হাই কোর্টের বিচারপতি, কী ভাবে মোড় পাল্টাল জীবনের?

কলকাতা: একের পর এক দুর্নীতির মামলা। একের পর এক তাৎপর্যপূর্ণ রায়৷ দুর্নীতির শিকড় উপরে ফেলতে তাঁর নির্দেশ কার্যত আলোড়ন ফেলে দিয়েছে গোটা রাজ্যে৷ আইন-মহলে তিনি এখন সবচেয়ে চর্চিত নাম৷ হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর কাছে তিনি ঈশ্বর৷ তাঁর নির্দেশ নতুন করে মানুষের মনে আস্থা জাগিয়েছে বিচার ব্যবস্থার প্রতি৷ তাঁকে নিয়ে জোড় চর্চা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ তিনি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ একদা ডব্লিউবিসিএস অফিসার থেকে আজ হাই কোর্টের বিচারপতির আসনে অভিজিৎ৷ 

আরও পড়ুন- কলকাতায় তাণ্ডব কালবৈশাখীর, বন্ধ টালিগঞ্জ থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা

মিত্র ইনস্টিটিউশনের মেন ব্রাঞ্চ থেকে পড়াশোনা তাঁর৷ গ্র্যাজুয়েশনের পর পাঁচ বছর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন অভিজিৎ৷ এর পর অবশ্য ওকালতি না করে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসেন এবং ‘এ’ গ্রেডের অফিসার হন৷ পোস্টিং ছিল উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে৷ শোনা যায় দুর্নীতির জন্যই সেই চাকরি থেকে সড়ে যান৷ জমির পাট্টা বিলি নিয়ে চরম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে৷ সেই সময়েও প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি৷ এর জন্য এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে৷ একজন ডব্লিউবিসিএস অফিসারের এই ভাবে অপদস্থ হওয়াটা বরদাস্ত করতে পারেননি তিনি৷ এর পরেই তিনি অন্য পথে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন৷ গায়ে জড়াল কালো কোর্ট৷ 

২০০৯ সালে থেকে তিনি ছিলেন এসএসসি’র ল অফিসার৷ এসএসসি’র যাবতীয় তথ্য আসত তাঁর কাছেই৷ ফলে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও ধারণা রয়েছে তাঁর৷ সেই অভিজ্ঞতাই তাঁর বিচার ধারায় প্রতিফলিত হয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ২০১৮ সালের ২ মে কলকাতা হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দু’বছর পর ২০২০ সালের ৩০ জুলাই হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। বিচারপতির আসনে বসার আগে দীর্ঘ ১০ বছর আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সেই সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ন্যাশনাল ইন্সিওরেন্সের মামলা। আপাতত শিক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলি বিচারের দায়িত্ব বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর ন্যাস্ত৷ 

প্রবল চাপের মুখেও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছেন৷ সম্প্রতি তাঁর এজলাস বয়কট করেছিলেন তৃণমূলপন্থী  আইনজীবীরা৷ তখন অভিজিৎ দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘‘মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। মারতে পারেন। মরতে রাজি আছি। কিন্তু দুর্নীতি দেখলে চুপ করে থাকব না। আওয়াজ তুলবই।’’ অনেকেই বলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন শিক্ষকদের দুর্নীতি দেখতে পারেন না, তেমনই শিক্ষকরা বিপদে পড়লেও তিনি সহ্য করতে পারেন না৷  ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষিকার ১২ দিনের বেতন কেটে নেওয়া প্রধান শিক্ষককে পদ থেকে সরিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর বকেয়া ইনক্রিমেন্টও দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে আশার আলো খুঁজছেন এসএসসি আন্দোলনকারীরাও৷ অনেকে তো জেলায় জেলায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত প্রচার শুরু করেছেন, ‘বেকারের নয়নমণি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়’।