কৃষকদের প্রতি অবিচার, বাংলাকে তুলোধনা করে গর্জে উঠল জয় কিষাণ আন্দোলন

কৃষকদের প্রতি অবিচার, বাংলাকে তুলোধনা করে গর্জে উঠল জয় কিষাণ আন্দোলন

efa78f288ed315c70200134bb76bb738

কলকাতা: ১১টি রাজ্যে সক্রিয় সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন জয় কিষান আন্দোলন, দেশের কৃষকদের এবং বিশেষ করে বাংলার কৃষকদের প্রতি বিভিন্ন অবিচার তুলে ধরতে কলকাতায় আজ এক সাংবাদিক সম্মেলন করে। এই সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, জয় কিষাণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র যাদব, সর্বভারতীয় সভাপতি অভীক সাহা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি প্রবীর মিশ্র, বাঁকুড়া জেলা সভাপতি ননী রায় এবং হুগলি জেলা সভাপতি সুশান্ত কাঁড়ি প্রমুখ।

আরও পড়ুন- সবাই সুবিধা পাচ্ছে? ‘কন্যাশ্রী’ নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিল সরকার

প্রতেক্যের বক্তব্যেই তীব্র শ্লেষ ধরা পড়ে সরকারের ওপর। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এমএসপি গ্যারান্টি আইন তৈরি করার বিষয়ে কৃষকদের বোকা বানাচ্ছে কিন্তু কৃষকরা আর লুণ্ঠিত ও প্রতারিত হতে রাজি নয়। ভারতব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ গড়ে উঠছে এবং এবার শেষ দেখে ছাড়া হবে। বিজেপি সরকারকে এভাবেই হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায় জয় কিষান আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র যাদবকে। অন্যদিকে, এই সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতির অভীক সাহার বক্তব্য, প্রত্যেক রাজ্যই সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের আয়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে অসংবেদনশীল ও উদাসীন। এদের হয় কোনো নীতি নেই বা শুধু কাগজে নীতি আছে যা বাস্তবায়িত হয় না। ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রপায়ণ না করার এক বড় উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গ। শুধু বাংলাকেই তারা আক্রমণ করেছেন তাই নয়, সংগঠনের স্পষ্ট কথা এমএসপি গ্যারান্টি আইন কার্যকর করতে অস্বীকার করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে রাজনৈতিক খেসারত দিতে হবে।

আরও পড়ুন- প্রাণও দিয়ে দেব! পাহাড়ে নির্বাচন ঘোষণা হতেই অনশনে গুরুং

বক্তব্যের পাশাপাশি তাঁরা যে সমস্যাগুলি তুলে ধরেছেন তার মধ্যে রয়েছে- ১) সংযুক্ত কিষান মোর্চার (জয় কিষান আন্দোলন যার অধিভুক্ত সংগঠন) দাবি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা এমএসপি গ্যারান্টি আইন প্রণয়ন ২) অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির (জয় কিষান আন্দোলন যার অধিভুক্ত সংগঠন) দাবি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য স্তরের এমএসপি আইন প্রণয়ন, ৩) জয় কিষাণ আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী রাজ্যে লিজ চাষিদের জন্য আইন প্রণয়ন, ৪) জয় কিষান আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী বাংলা ফসল বীমা যোজনার অধীনে সব ফসলের বীমা এবং দ্রুত উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান, ৫) জয় কিষান আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী বাংলার উদ্বাস্তু কৃষকদের সরকারের দেওয়া জমির জন্য অবিলম্বে পরচা প্রদান এবং ৬) জয় কিষান আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী রাজ্যের সব কৃষককে পি এম কিষাণ নিধি প্রকল্প এবং কৃষক বন্ধু প্রকল্পের অধীনে আনা।

যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, কৃষকদের উপর যে অন্যায়ের জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ গড়ে উঠছে এবং এবার শেষ দেখে ছাড়া হবে। বিক্ষোভ শুধু দিল্লিতে নয়, প্রতিটি রাজ্যের রাজধানী, প্রতিটি জেলা সদর, প্রতিটি ব্লক অফিসে সংগঠিত করা হবে। দেশের কোনো রাজ্য সরকারই কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার অধিকার রক্ষার কথা ভাবে না। তিনি জানান, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে এআইকেএসসিসি একটি খসড়া আইন বানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাঠিয়ে বিবেচনা করার প্রস্তাব দেয় কিন্তু সরকার খসড়াটির প্রাপ্তি স্বীকার অবধি করেনি। একই রকম সুর অভীক সাহার গলায়। তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের আয় সুরক্ষার বিষয়ে অসংবেদনশীল এবং উদাসীন। এই সরকারের হয় কোনো নীতি নেই বা এদের শুধু কাগুজে নীতি আছে যা বাস্তবায়িত হয় না। কৃষকদের শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয় কিন্তু রুপায়ন করা হয় না।

আরও পড়ুন- সাইকেল নিয়ে বামেদের একহাত ফিরহাদের, শোনালেন বর্তমান উন্নয়নের কথা

জয় কিষান আন্দোলনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি প্রবীর মিশ্রর বক্তব্য, বাংলা শস্য বীমার আওতায় কভারেজ খুবই কম এবং অধিকাংশ কৃষকই এর আওতায় পড়েনি। সুন্দরবনের মতো দুর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলিতে কৃষকরা একের পর এক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে কিন্তু ফসল বীমার কোন সুরক্ষা পাচ্ছে না। এর ফলে ব্যাপক অভিবাসন, নারী ও শিশু পাচার এবং অন্যান্য অনেক সামাজিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সব  কৃষকের সব প্রধান ফসলগুলি বীমার আওতায় নিশ্চিত করতে সরকার কেন ‘দুয়ারে বীমা’ প্রকল্প আনতে পারছে না? এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *