কলকাতা: শহরজুড়ে হালকা শীতের আমেজ৷ শীত আসতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি৷ এরই মধ্যে রাজ্যে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত৷ ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ২০১৯ সালের সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বেড়েই চলেছে ডেঙ্গিতে মৃত্যু-মিছিল৷
আরও পড়ুন- শরীরের কথা জানাবে পোশাক! বিশেষ উপাদানে তৈরি সুতোয় চমক দিলেন বিজ্ঞানীরা
ঋতু বদলের এই মরশুমে হালকা সর্দি-কাশি, জ্বর অনেকেরই হয়ে থাকে৷ সাধারণ জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গির জ্বরের খুব ফারাক নেই। ফলে এটা সাধারণ জ্বর, কোভিড না ডেঙ্গি, তা বুঝে ওঠা বেশ কষ্টকর৷ অনেক সময় অসুখের গোড়ায় পৌঁছতেই দেরি হয়ে যায়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গিকে গুলিয়ে ফেলে যদি অবহেলা করা হয়, তাহলে রোগীর শরীরে জটিলতা বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে৷ এক্ষেত্রে করনীয় কী? সাধারণত ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী মশা কামড়ানোর তিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর আসে। দু’দিনের বেশি শরীরে জ্বর থাকলেই আর অবহেলা নয়৷ দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷
সব মশা কিন্তু ডেঙ্গির বাহক হয় না৷ এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়েই এই রোগ হয়৷ ফি বছর পৃথিবীর প্রায় ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। কারও কারও ক্ষেত্রে এই জ্বর মারাত্মক আকার নেয়। চিকিৎসার পরিভাষায় যা ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার বলে পরিচিত। সাধারণ শিশু ও বয়স্কদের মধ্যেই ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভারেপ প্রবণতা অধিক দেখা যায়৷ তবে আজকাল অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যেও জ্বরের প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে যাঁরা এক বার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বার ডেঙ্গির কবলে পড়লে, পরিস্থিতি মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। ‘হেমারেজিক’-এর অর্থ হল রক্তপাত। এর ফলে রোগীর শরীরের বিভিন্ন ধমনী ও শিরা ফেটে যায় এবং সেই ক্ষত থেকে গলগল করে রক্ত ও প্লাজমা বেরতে শুরু করে। বাইরে থেকে রক্ত দেওয়া হলেও ক্রমাগত রক্তক্ষরণে রোগীর শারীরিক অবস্থা জটিল হয়ে ওঠে। কখন কোন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর অবস্থা মারাত্মক আকার নেবে, তা আগে থেকে কিন্তু বোঝা সম্ভব নয়৷
ডেঙ্গির জ্বরের সাধারণ উপসর্গগুলি কী কী?
১) জ্বর, মাথাযন্ত্রণা, সারা শরীরে ব্যথা। চোখের পিছনে ব্যথা শুরু হওয়া৷
২) বমি বমি ভাব, মুখে অরুচি। সঙ্গে গাঁটে ব্যথা।
৩) গায়ে র্যাুশ, চুলকানি ও ডায়েরিয়া।
৪) নাক, মাড়ি কিংবা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া৷
৫) গলায় ব্যথা, ঢোক গিলতে কষ্ট।
কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে যে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন আছে?
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। যেমন-
১) পেটে ব্যথা।
২) মল বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত।
৩) সারা দিনে প্রস্রাবের পরিমাণ আগের চেয়ে কমে যাওয়া।
৪) শ্বাসকষ্ট।
৫) ত্বকে লাল লাল র্যারশ।
৫) ডেঙ্গি শক সিনড্রোমের ফলে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়। একলাফে পাল্স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ কমে যায়। শরীর ঠান্ডা হতে থাকে৷ দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস চলতে থাকে। রোগীর মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়৷ এমনটা হলে সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।
কী ভাবে শরীর চাঙ্গা করতে হবে?
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। পাশাপাশি ডায়েটে বেশি করে রাখতে হবে ডাবের জল, ফলের রস, স্যুপ, স্টু, লিকার চা৷ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে প্রোটিন-সমৃদ্ধ ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল বেশি করে খেতে হবে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>