কলকাতা: সোমবার পশ্চিমবঙ্গ NSQF শিক্ষক পরিবার সংগঠনের Health Care Sector-এর শিক্ষক, শিক্ষিকাদের উদ্যোগে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তি ও মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে সকল চাকরিপ্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হল। এছাড়াও হবু শিক্ষিকাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য স্যানিটারি প্যাড ব্যাঙ্ক উদ্বোধন করাও হয়েছে। সংগঠনের বক্তব্য, শিক্ষক হিসেবে তাঁদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। তারা সবাই পাশে আছেন। এদিনের কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গ NSQF শিক্ষক পরিবারের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ ভৌমিক উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক কর্মসূচির পরে যে সব শিক্ষকরা ছাঁটাই হবেন তাঁরাই সেবা করলেন হবু শিক্ষকদের।
আজকে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে সকল চাকুরিপ্রার্থী ও মাতঙ্গিনী হাজরার নীচে সকল চাকুরীপ্রার্থীদের রক্তচাপ, রক্তের সুগার ও বিভিন্ন পরীক্ষা করা হল এবং ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ জনকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এদিন সবার হাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয় এবং ধর্না মঞ্চে হবু শিক্ষিকাদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে ও স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা দিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দেওয়া হয়। ধর্না মঞ্চে স্যানিটারি প্যাড ব্যাঙ্ক গড়ে তোলা হয়। প্রয়োজনে ওই প্যাড ব্যাঙ্ক থেকে পরবর্তীতে হবু শিক্ষিকারা প্যাড যাতে নিশুল্কে নিতে পারেন তাঁর ব্যবস্থা এনএসকিউএফ শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। ৫৯৬ দিন ধরে অবস্থান মঞ্চে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা এরকম উদ্যোগে স্বভাবতই খুশি।
পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবারের রাজ্য সম্পাদক বলেন, “যাঁরা চাকরি চুরি করে তাঁদের জন্য মেডিক্যাল টিম গঠন হয়, অথচ হকের চাকরি পেতে খোলা আকাশের নীচে ৫৯৬ দিন বিনা চিকিৎসায় বসে থাকতে হয়, এটা আমাদের রাজ্যের লজ্জা। আমরা শিক্ষক,আমাদের কিছু নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। সরকার নৈতিক দায়িত্ব পালন করছে না। যাঁরা চুরি করছে তাঁদের বাঁচাতে কোর্টে ছুটছেন। আমরা হেল্থ কেয়ারের শিক্ষক, শিক্ষিকাদের উদ্যোগে যাঁরা কিছুদিন পরে ছাঁটাই হবেন তাঁরাই কর্তব্য পালন করছেন। আমাদের ফার্মাসিস্ট ও ডক্টর বাবুদের দিয়ে আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। বিভিন্নজন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। তাঁদের পাশে থাকতেই আমাদের এই উদ্যোগ।”
আরও পড়ুন- আরও বাড়ছে পাউরুটির দাম, কাবে থেকে কার্যকর নতুন দাম? দেখুন
এদিন রাজ্য সরকারকে আবার আক্রমণ করা হয়েছে এই নিয়োগ ইস্যুতে। সংগঠনের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের সরকার ও সরকার পোষিত বিদ্যালয়গুলিতে দিনের পর দিন শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে, তবুও রাজ্য সরকারের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। মেলা, খেলা ও কার্নিভালে রাজ্য সরকার ব্যস্ত। এদিন ধর্মতলায় যারা গান্ধী মূর্তির পাদদেশে এলেন সেই ‘এনএসকিউএফ’ শিক্ষক পরিবার সংগঠনের হেল্থ কেয়ার সেক্টরের বেশ কিছু শিক্ষক,শিক্ষিকারা সমগ্র শিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষাদান করে থাকেন। স্থায়ী বিষয় হওয়া স্বত্বেও অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছে এই শিক্ষক, শিক্ষিকাদের। মূলত হেল্থ কেয়ার, ইনফরমেশন টেকনোলজি, কন্সট্রাকশন, অটোমোটিভ,টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি, বিউটি এন্ড ওয়েলনেস প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদান করে থাকেন।
আরও পড়ুন- আদালতে ঢোকার পথে মেজাজ হারালেন পার্থ, আঙুল উঁচিয়ে বললেন ‘চুপ করে থাকুন’,
অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে বিষয়টি স্কুল এডুকেশনের দ্বারা পরিচালিত হলেও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কারিগরি দফতরের হাতে দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয়। কারিগরি দফতর বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা দিয়ে এই ধরনের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দায়িত্বভার দিয়ে দেয় বেসরকারি সংস্থার হাতে। সমগ্র শিক্ষা অভিযানের অন্তর্ভুক্ত হলেও শিক্ষকদের কাজের কোনও নিরাপত্তা নেই। বেসরকারী সংস্থাগুলি নিজেদের ইচ্ছামতো শিক্ষক নিয়োগ করে আবার নিজেদের ইচ্ছামতো শিক্ষকদের ছাঁটাইও করে। দাবি করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১০২ জন শিক্ষক ও ২১৭ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের ছাঁটাই করা হয়েছে। এছাড়াও অনেককেই মাসের পর মাস বেতনহীন অবস্থায় থাকতে হয়।