কলকাতা: অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে ‘বেনামি’ নিয়োগ মামলায় উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য৷ কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন জানালেন, এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হয়েছিল খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশে৷ আর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে! তাঁর দাবি, অযোগ্যদের যাতে চাকরি না যায় তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, নতুন করে শূন্যপদ তৈরি করে অবৈধ চাকরিপ্রাপকদের চাকরি সুরক্ষিত রাখতে হবে৷
আরও পড়ুন- ফের জেল হেফাজতের নির্দেশ অনুব্রতর জন্য, জামিনের আবেদন এল না
বিচারপতির প্রশ্ন, ‘আইনে সংস্থান নেই, তবু কীভাবে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত? রাজ্য মন্ত্রিসভার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্তে আমি বিস্মিত! আপনি কি জানেন, কমিশনের আইন অনুযায়ী বেআইনি নিয়োগ করা যায় না? তার পরেও কেন বেআইনি শূন্যপদ তৈরি করা হল?’, ‘বেনামি আবেদন’ মামলায় শিক্ষাসচিবকে প্রশ্ন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।
তিনি আরও বলেন, ‘‘অবৈধদের চাকরি বাঁচানোর জন্য কোনও মন্ত্রিসভা বৈঠক করতে পারে? এটা একটা রাজ্যের শাসন নীতি? আমি এটাই বোঝার চেষ্টা করছি রাজ্যের মন্ত্রিসভা কী ভাবে অবৈধ চাকরি প্রাপ্যদের চাকরি রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ এ নিয়ে কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল! মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত কি ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী নয়? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এ রাজ্যের পক্ষে নয়, গোটা দেশের পক্ষেই তা বিপজ্জনক। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সঠিক ব্যক্তির হাতে না গেলে উন্নতি সম্ভব নয়।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে দাঁড়িয়ে শিক্ষাসচিব স্পষ্ট বলেন, ‘এই বিষয়ে নির্দিষ্ট স্তর থেকে নির্দেশ এসেছিল। নির্দেশ দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷’ তাঁর দাবি, শিক্ষামন্ত্রী এই বিষয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই মতো আইন দফতরের সঙ্গেও আলোচনা হয়। এজি-র সঙ্গেও কথা বলা হয়৷ এমনকি এসএসসি-র চেয়ারম্যানের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানান শিক্ষাসচিব৷ তাঁর আরও দাবি, ‘মুখ্যসচিবকে জানিয়ে ক্যাবিনেটে নোট পাঠানো হয়।’
এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রশ্ন, ‘অবৈধদের নিয়োগ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন আইনজীবীরা? ‘আপনার কি মনে হয় না যে অবৈধদের বাঁচানোর জন্যেই এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি৷ অবৈধদের সরানোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছিল কি?’ গোটা বিষয়ে সরকারের ভূমিকায় বিস্মিত বিচারপতি৷ তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় কী ভাবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? এটা ভেবেই আমি বিস্মিত৷ মন্ত্রিসভাকে স্পষ্ট ভাবে বলতে হবে যে, তাঁরা অযোগ্যদের পাশে নেই।’ সেই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, ১৯ মে-র বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে এমন আদালত এমন পদক্ষেপ করবে যা গোটা দেশে কখনও হয়নি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘হয় গণতন্ত্র সঠিক হাতে নেই, না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হয়নি।’ সঙ্গে হুঁশিয়ারি, ‘মন্ত্রিসভাকে পার্টি করে দেব। সকলকে এসে জবাবদিহি করতে হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি নির্বাচন কমিশনকে বলব তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক প্রত্যাহার করে নিতে৷ সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছা করা যায় না৷ কমিশন যেন দল হিসেবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করে৷’’ এ দিনের শুনানিতে মুখ্যমন্ত্রীর কথাও উঠে আসে৷ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রীর যন্ত্রণা বুঝতে পারি। কিন্তু কিছু দালাল, যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত, তারা আদালতের নামে যা ইচ্ছা বলছে। নিয়োগ হলেই আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছে। আদালত কি এগরোলের মতো স্থগিতাদেশ বেচে নাকি? যে আদালতে এলেই স্থগিতাদেশ পেয়ে যাবে।’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>