ছিলেন রুশ সেনার দুর্ধর্ষ মহিলা ‘স্নাইপার’, জখম হতেই ‘বগীরা’কে ছুড়ে ফেলল পুতিন বাহিনী

ছিলেন রুশ সেনার দুর্ধর্ষ মহিলা ‘স্নাইপার’, জখম হতেই ‘বগীরা’কে ছুড়ে ফেলল পুতিন বাহিনী

6ee2451bfe0181314cdd5aee174f8336

মস্কো: দুর্দান্ত নিশানা৷ আসাধারণ পারদর্শিতা৷ নিজেকে শত্রুর চোখের আড়ালে রেখে কী ভাবে ধ্বংসলীলা চালাতে হয়, তা ভালোমতোই জানেন রাশিয়ার এই বন্দুকবাজ৷ রুশ বাহিনীর অন্যতম সেরা শ্যুটার তিনি। কিন্তু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে সেই তিনিই যখন জখম হলেন, তখন তাঁর আত্মত্যাগ, পরিশ্রমের কথা মনে রাখল না কেউ৷ তাঁকে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে পলাল রুশ সেনা। আপাতত ইউক্রেনের সেনার হাতে বন্দি রাশিয়ার সেই মহিলা বন্দুকবাজ৷ নাম ইরিনা স্টারিকোভা। 

আরও পড়ুন- দৈর্ঘ্য ৯৮ ফুট! ম্যাপে ধরা পড়ল বিরাট সাপের ‘কঙ্কাল’

ইরিনাকে ভালোবেসে তাঁর সহকর্মীরা ডাকতেন ‘বগীরা’ নামে। রুশ বাহিনীর এই বাঘিনী রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের জনপ্রিয় বই ‘দ্য জাঙ্গল বুক’-এর কালো বাঘ ‘বগীরা’র মতোই ক্ষিপ্র। বাঘের মতোই আড়ালে লুকিয়ে দূর থেকে নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করতে পারেন। তিনি যে পেশাদার ‘স্নাইপার’। রুশ সেনাবাহিনীতে মুখে মুখে ফেরে ইরিনার বীরগাথা৷ ইরিনার নিখুঁত নিশানায় তাঁর ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৪০ জন শত্রু। এর মধ্যে অধিকাংশই নিহত হয়েছে ইউক্রেনের যুদ্ধে৷ কিন্তু ইরিনা এখন ইউক্রেনের হাতে বন্দি৷ চোট লেগেছে তাঁর৷ সেদেশ থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরবেন কিনা, তা নির্ভর করছে ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতেই।

ইরিনার বয়স ৪১৷ দুই কন্যা সন্তানের মা। তাঁর দুই কন্যার মধ্যে এক জনের নাম ভ্যালেরিয়া৷ বয়স ১১। অন্য জনের নাম ইউলিস৷ বয়স মাত্র ৯। ইউক্রেনের দুই রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং স্বাধীনতাকামী অঞ্চল দনেৎস্ক ও লুহানস্ক (একত্রে ডনবাস বলা হয়)। ইরানার বাড়ি দনেৎস্কে৷ রাশিয়ার মদতপুষ্ট এই দুই অঞ্চল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অন্যতম কারণ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করার পরেই স্বেচ্ছায় রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ইরিনা। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। তাঁর বন্দুকের নিশানায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বিপক্ষ৷ প্রাণ গিয়েছে বহু সাধারণ মানুষের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সেনার হাতে বন্দি হন তিনি৷ রাজধানীর সেনাপ্রহরীরা সাফ জানিয়েছেন, যারা কিয়েভের শান্তি বিঘ্নিত করবে, ধরা পড়লে তাদের পাল্টা প্রত্যাঘাতের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। তাই ধরার পড়ার পরেই ইরিনার মুখে উল্টো সুর৷ রাশিয়ার অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি৷ 

ইরিনা

রুশ সেনার ব্যবহারে হতাশ ইরিনা৷ সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে তিনি বলেন, ‘‘ওরা দেখল আমি যুদ্ধক্ষেত্রে জখম হয়েছি। চাইলেই সেখান থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যেতেই পারত। ওদের কাছে সেই ক্ষমতাও ছিল। কিন্তু ওরা সেটা করেনি৷ বরং আমাকে ফেলে রেখে চেলে গেল। শুধু তা-ই নয়, কেউ কেউ আবার আমার মৃত্যুকামনাও করল৷’’ 

অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই রাশিয়াই মহিলা বন্দুকবাজদের উপর ভরসা করত। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন মেয়েদের নিরাপদ কাজে নিয়োগ করার কথা ভাবছে, তখন মহিলাদের হাতে বন্দুক তুলে দিয়েছিল রাশিয়া৷ মহিলা বন্দুকবাজদেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল দেশের হয়ে যুদ্ধ করার। অবভক্ত সোভিয়েত রাশিয়ার সেরা এবং সফলতম মহিলা বন্দুকবাজ ছিলেন ল্যুডমিলা পাভলিচেঙ্কো। ইউক্রেন রাশিয়ার এই যুদ্ধে মাঝে ইরিনার মতো স্নাইপারের এই বোধোদয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধনীতির মুখে একটা সজোর থাপ্পড় বলেই মনে করছেন পুতিন সমালোচকরা।