কলকাতা: সৃজনশীল সমাজ বলতে আমরা যা বুঝি, আক্ষরিক অর্থেই কি তাই? ‘উচ্চশিক্ষিত’,‘সমৃদ্ধশালী’ এই সব তকমাগুলির নেহাতই কাগুজে হয়ে যাচ্ছে বাস্তবের প্রেক্ষাপটে। যে সমাজে কন্যা সন্তানরা অবহেলিত, সেই সমাজ সুশীল হবে কী ভাবে? পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতা সহ দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমানে উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে কন্যাসন্তানের জন্মের হার। কী ভাবে? এই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে।
আরও পড়ুন- নবম-দশম শ্রেণির কাউন্সেলিংয়ের নির্দেশ হাইকোর্টের, সময়সীমাও বৃদ্ধি হল
বড় বড় শহরে খোলাখুলি ইউএসজি, এমআরআই প্রভৃতি নন-ইনভেসিভ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ সহজ নয়৷ তবে বিজ্ঞানকে ঢাল বানিয়ে লিঙ্গ নির্ধারণ করছে অসাধু চক্রীরা৷ নন-ইনভেসিভ প্রিনেটাল টেস্টিং বা এনআইপিটি’র দিকে ঝুঁকছে তারা। যেখানে রক্তপরীক্ষার মাধ্যমেই ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব। এমনটাই আশঙ্কা স্বাস্থ্যভবনের।
২০২০ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (সিআরএস) অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় পুত্র ও কন্যা সন্তান জন্মের অনুপাতে উদ্বেগজনক পার্থক্য লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ এর মধ্য রয়েছে খাস কলকাতা (৯৩৬)-ও৷ এছাড়াও রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর (৯৩৯ ও ৯০৭), নদীয়া (৯৩৬), উত্তর দিনাজপুর (৯২২) ও কালিম্পং (৯২৬)।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত থাকে রাজ্য স্বাস্থ্যদফতরের নিজস্ব তথ্যভাণ্ডার এইচএমআইএস বা হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে। ২০২১-২২ সালের এইচএমআইএস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কন্যাসন্তান জন্মে পিছিয়ে থাকা জেলাগুলি হল যথাক্রমে কলকাতা (৯৩৬), কোচবিহার (৯৩১), মালদহ (৯৩৩), পশ্চিম মেদিনীপুর (৯৩৭), পশ্চিম বর্ধমান (৯১২), হুগলি (৯৩৪), পুরুলিয়া (৮৯৭) এবং ঝাড়গ্রাম (৯২৪)।
দেশের অন্যতম বড় সমীক্ষা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (এনএফএইচএস) ৫ অনুযায়ী উদ্বেগজনক ভাবে কলকাতায় (৮০৯) কমেছে কন্যাসন্তান জন্মের হার৷ এছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর (৭৭৭), পুরুলিয়া (৮৬০), পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান (৮৭৭ ও ৭৮৭) এবং বীরভূম (৯৩৪) জেলার চিত্রও বেশ সঙ্গীন৷
কিন্তু কন্যা সন্তানের জন্মের হার কমার পিছনে আসল রহস্যটা কী? পিজি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডাঃ সুভাষ বিশ্বাসের কথায়, কলকাতাসহ কিছু বড় শহরে কন্যাসন্তানের জন্ম উল্লেখজনক ভাবে কমছে। তিনি বলেন,অ্যানুইপ্লয়েডি বা ক্রোমোজোম সংক্রান্ত বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি (ডাউনস সিনড্রোম সহ ) নির্ধারণের পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ৷ আর সেই পরীক্ষাকে ঢাল করে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে যদি কেউ আইনি গর্ভপাত করান, তাহলে আটকাবে কে? অসাধু কারবারিরা সামান্য রক্তপরীক্ষা করিয়েই লিঙ্গ নির্ধারণ করছে। এই রোগ আটকাতে পুলিশ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যদফতর, মন্ত্রক, চিকিৎসক সমাজ—সকলকেই আরও সজাগ হতে হবে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>