কলকাতা: করোনা কেড়ে নিয়েছে স্ত্রীকে৷ বিচ্ছেদের সেই যন্ত্রণা থেকেই জন্ম নিয়েছিল নতুন ভাবনা৷ যার বাস্তব পরিণতি হল সিলিকন মূর্তি৷ নিষ্প্রাণ, তবুও আজও যেন তাঁর অস্তিত্ব চার দেওয়ালের অন্দরে৷ স্ত্রী স্মৃতিতে অমর করতে অসাধ্যসাধন করলেন কৈখালির বাসিন্দা তাপস কুমার সান্ডিল্য৷
আরও পড়ুন- হাইকোর্টে অশান্তি, দুটি পৃথক মামলা রুজু করল লালবাজার
খানিক কবি কল্পনার মতোই ফিরে এসেছেন তিনি৷ কখনও বসছেন সোফায়, কখনও চেয়ারে৷ পরনে তাঁর প্রিয় শাড়ি৷ গা ভর্তি সোনার গয়না৷ টিকলি থেকে, নাকছাবি, হাতের চুরি, গলার হার সবই তাঁর ব্যবহৃত৷ করোনা প্রাণ কেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাড়তে পারেনি ভালোবাসাকে৷ এখানে প্রেম যে অনন্ত৷
আজ থেকে ঠিক এক বছর সাত মাস আগে করোনায় হারিয়েছিলেন স্ত্রীকে৷ তবে স্ত্রীর সঙ্গে আজীবন একসঙ্গে কাটানোর চিন্তাভাবনা থেকেই জন্ম নেয় এই সিলিকন মূর্তি৷ তার সঙ্গেই জীবনযাপন তাপসবাবুর৷ তাঁর কথায়, ‘‘এইমূর্তি নিয়েই আনন্দে থাকি৷ ও যে চলে গিয়েছে, সেই অনুভূতিটা কিছুটা হলেও কমে যায়৷’’
২০১৭ সালে এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের পদ থেকে অসবর নেন তাপসবাবু৷ স্ত্রী ইন্দ্রানী ছিলেন সুনিপুণ গৃহকর্ত্রী৷ স্ত্রীর সঙ্গে ভালোই কাটছিল অবসর জীবন৷ কিন্তু সব উলট পালট করে দেয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ৷ এক সঙ্গেই করোনা আক্রান্ত হন এই দম্পতি৷ ২০২১ সালের মে মাসে মারা যান ইন্দ্রানী৷ সেই সময় করোনা আক্রান্ত থাকায় তাপসবাবু শেষ দেখাও দেখতে পাননি স্ত্রীকে৷ বিচ্ছেদের সেই যন্ত্রণা থেকেই স্ত্রীকে জীবন্ত করে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
তবে শুধু বিচ্ছেদের যন্ত্রণাই নয়, অনেকদিন আগে একবার স্ত্রীকে নিয়ে মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরে বেড়াতে গিয়েছিলেন তাপসবাবু। সেখানে প্রভুপাদের মৃর্তি দেখে আবেগভরা কণ্ঠে ইন্দ্রাণী বলেছিলেন, আমি আগে চলে গেলে আমার এমন একটা মূর্তি গড়বে? সে সময় এ সব কথার মূল্য ছিল না বটে। কিন্তু স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে বারবার তাপসের মনে পড়ত ইন্দ্রাণী সেই কথাটি। ইন্দ্রাণীর মূর্তিটি দেখলে ক্ষণিকের জন্য মনে হবে যেন জলজ্যান্ত একটি মানুষ বসে রয়েছেন। মৃত্যুর পর প্রাণপ্রিয় মানুষটিকে এভাবেই ধরে রাখলেন তাপসবাবু৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>