কেন্দ্রের চেয়ে রাজ্যে বেশি ছুটি দিই আমরা, মাথা কাটলেও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়, সাফ বললেন মমতা

কেন্দ্রের চেয়ে রাজ্যে বেশি ছুটি দিই আমরা, মাথা কাটলেও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়, সাফ বললেন মমতা

কলকাতা: মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি৷ বিধানসভা বাজেট অধিবেশনে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য৷ তাতে একেবারেই না খুশ সরকারি কর্মচারীরাবৃন্দ৷ তাঁদের দাবি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে হবে৷ প্রতিবাদে চলছে বিক্ষোভ৷ সোমবার সেই বিক্ষোভ মঞ্চে গিয়ে সমর্থন জানিয়ে এসেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এর পরেই বিধানসভায় ডিএ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম আলম থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্যের ছুটির ফারাকের প্রসঙ্গ, সবটাই টেনে আনলেন তিনি৷ তুলে ধরলেন, দুই সরকারের কর্মচারীদের বেতন কাঠামোর ফারাকের কথাও। 

আরও পড়ুন-দোল-হোলির জন্য আঁটোসাঁটো শহরের নিরাপত্তা, প্রায় ৪ হাজার পুলিশ রাস্তায়

তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের চেয়ে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের পে স্কেলে অনেকটাই তফাৎ৷ ১০৫ শতাংশ ডিএ দিচ্ছি, আর কত চাই, কত হলে সন্তুষ্ট হবেন আপনারা? আমায় পছন্দ না হলে আমার মুণ্ডু কেটে নিন, কিন্তু, এর চেয়ে বেশি আমার থেকে পাবেন না৷’’ বিধামনসভায় দাঁড়িয়ে মমতা আরও বলেন, ‘‘পেনশন না দিলে আমাদের ২০ হাজার কোটি টাকা বেচে যায়৷ বিরোধীদের কাছে জানতে চাইছি, পেনশন কি বন্ধ করে দেব?’’ 

এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী তিনি ৩ শতাংশ ডিএ দিয়েছেন৷ এর চেয়ে বেশি তাঁর পক্ষে দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়৷ এমনকী তাঁর মুণ্ডু কেটে নিলেও এরচেয়ে বেশি ডিএ তিনি দিতে পারবেন না৷ কারণ, বিভিন্ন আর্থ সামাজিক প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারকে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়৷ তার উপর রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারে বঞ্চনা৷ বিভিন্ন খাতে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লির সরকার৷ এই অবস্থায় সরকারের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ছিল, ততটাই করা হয়েছে৷ 

মমতা আরও বলেন, অন্যান্য রাজ্যে পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু এ রাজ্যে সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পেনশন পান৷ এই পেনশন বন্ধ করা হলে ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে৷ আজ বিধানসভা ছিল বিরোধী শূন্য৷ বিরোধী আসনের দিকে তাকিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিরোধীরা তাহলে বলুন পেনশন বন্ধ করে দিই৷ 

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে বাম প্রসঙ্গও৷ তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম আমলেও ডিএ বাকি ছিল। ৩৪ বছরে পুরো ডিএ দেয়নি। সিপিএম মাত্র ৩৩ শতাংশ ডিএ দিয়েছিল৷ ৯৯ শতাংশ ও ৬ শতাংশ মিলিয়ে আমরা ১০৫ শতাংশ ডিএ দিয়েছি।’’ 

তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো রাজ্যের থেকে আলাদা৷ আর কেন্দ্রের সরকার কত দিন ছুটি দেয়? আমরা দুর্গাপুজোয় দশ দিন ছুটি দিই। ছট পুজোয় ছুটি দিই। তাছাড়া  দশ বছরে একবার সরকারি কর্মচারীদের শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, তাইল্যান্ড যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি।’’  তাঁর আরও সংযোজন, কেন্দ্রীয় সরকারের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আছে৷ রাজ্য সরকারের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নেই৷ সীমিত ক্ষমতা থেকেই আমরা সরকারি কর্মচারীদের জন্য যথা সম্ভব কাজ করি৷ মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আরও জানান, ত্রিপুরা ও উত্তর প্রদেশ ডিএ দেয় না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘টাকা আকাশ থেকে পড়বে না।’’ 

মুখ্যমন্ত্রীর বক্ত্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারীরাও৷ এক আন্দোলনকারী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন লাগু হয়েছে৷ এই সাত বছরে ৬ শতাংশ করে ডিএ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ সারা দেশে যেখানে ৪২ শতাংশ ডিএ দেওয়া হচ্ছে৷ উনি আইনের কথা না বলে অন্য যুক্তি দেখাচ্ছেন৷ অপর এক পেনশনভোগী কর্মচারী বলেন, পেনশনের টাকা রাজ্য সরকার দেয় না৷ এজি-র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার দেয়৷ এখানে ওঁর ক্রেডিট নেই৷ এসব কথা বলে উনি মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন৷