অন্ধকারে কাটবে গ্রীষ্মের রাত! বাড়ছে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা

অন্ধকারে কাটবে গ্রীষ্মের রাত! বাড়ছে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা

নয়াদিল্লি: আসছে কাঠফাটা গরমের দিন৷ ঘর থেকে অফিস-কাছারি, দোকানপাট সর্বত্র বনবন করে ঘুরবে পাখা, চলবে এসি৷ পাল্লা দিয়ে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা৷ বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখার পর জোর জল্পনা, চাহিদা বাড়লেও নতুন তাপ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে দেরি হয়েছে ভারতে। ফলে আগামী এপ্রিল-মে মাসে রাতের দিকে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ 

আরও পড়ুন- অ্যাডিনোর ছায়ায় বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জাও, রাজ্যগুলিকে সতর্কবার্তা কেন্দ্রের

সৌর বিদ্যুৎ-এর জোগান ভারতে দিনের বেলার বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলেও তাপ ও জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতির প্রভাব পড়বে গ্রীষ্মের রাতে৷ আগের চেয়ে সৌর বিদ্যুতের জোগান বাড়লেও তা রাতের চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়৷ আর এটাই দুশ্চিন্তার কারণ৷  যদিও বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা উড়িয়ে কেন্দ্রের দাবি, লোডশেডিং রুখতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আগাম ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সংস্থাগুলিকে নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মন্ত্রী। 

গ্রিড কন্ট্রোলার অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক নোটে কিন্তু সঙ্কটের ইঙ্গিত মিলেছে৷ তাতে জানানো হয়েছে, আগামী এপ্রিলে রাতের দিকে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুতের জোগান ১.৭% কম থাকতে পারে। সেই সময় সর্বোচ্চ চাহিদা ২১৭ গিগাওয়াটে পৌঁছে যাতে পারে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়েও ৬.৪% বেশি। কারণ, চলতি বছর রেকর্ড গরমের ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। গরমের হাত থেকে নিস্তার পেতে এসি-র ব্যবহার বহুলাংশে বাড়তে চলেছে৷ ফলে বিদ্যুৎ-এর চাহিদাও বাড়বে লাফিয়ে৷ এই বর্ধিত চাহিদা মেটানো সম্ভব না হলে লোডশেডিং অনিবার্য৷ তখন গরমে নাজেহাল হতে হবে গৃহস্থদের৷ যে সব শিল্প সংস্থায় ২৪ ঘণ্টা কাজ হয় (গাড়ি, বৈদ্যুতিন, ইস্পাতের বার, সার ইত্যাদি), রাতে লোডশেডিং হলে সেই সব শিল্পেও ঝুঁকি বাড়বে৷ কাগজ শিল্পের প্রাক্তন কর্তা পি জি মুকুন্দন নায়ারের দাবি, এক মিনিটের জন্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হলে এইসব শিল্পে ব্যপক প্রভাব পড়ে৷ বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়।

পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত, কয়লা, পারমাণবিক এবং গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র মিলিয়ে রাতের সর্বোচ্চ চাহিদার প্রায় ৮৩% পূরণ করা সম্ভব। বাকি চাহিদাটুকু পূরণের জন্য জলবিদ্যুৎই হল একমাত্র দূষণহীন বিকল্প৷ তাছাড়া এটি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি অনুযায়ী জোগান দিতে পারে। কিন্তু, গ্রিড ইন্ডিয়ার পূর্বাভাস বলছে, এপ্রিলে সর্বোচ্চ চাহিদার দিনগুলিতে এর জোগান ১৮% কম থাকতে পারে।

গত পাঁচ বছরের হিসাব অনুযায়ী, আমাদের দেশে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে দিনের সামগ্রিক চাহিদার ১৮% পূরণ করেছিল। কিন্তু সূর্যাস্তের পরে যে তাপ বিদ্যুৎ-এর সম্ভার, গত পাঁচ বছরে তার উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে মাত্র ৯%। প্রায় ২৬টি কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হতে এক বছরেরও বেশি দেরি হয়েছে। যে কেন্দ্রগুলির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৬.৮ গিগাওয়াট৷ কয়েকটির ক্ষেত্রে তো আবার ১০ বছরেরও বেশি দেরি হয়েছে। এর একাধিক কারণও রয়েছে৷ কোথাও পরিবেশ সংক্রান্ত বিরোধিতা, কোথাও আবার জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ নিয়ে আইনি জটিলতা-সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত জল ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷ সেইসঙ্গে বিদেশি লগ্নির অভাবও দেখা দিয়েছে।

তবে বিদ্যুৎ সচিব অলোক কুমারের দাবি, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা এড়াতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রাজ্যেই জোগান ঠিকঠাক রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎমন্ত্রী আরকে সিং বিদ্যুৎ, কয়লা ও রেল মন্ত্রকের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করেন। বিদ্যুৎ পরিষেবা ঠিক রাখতে আগাম ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন।

বিদ্যুৎ মন্ত্রক জানাচ্ছে, ভরা গ্রীষ্মে প্রবেশের অনেক আগেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত কয়লা মজুত রাখা হবে৷ সেই উদ্দেশে আপাতত ৪১৮টি রেক এবং পরে প্রয়োজন মতো আরও জোগানের আশ্বাস দিয়েছে রেল। যারা আমদানিকৃত কয়লার উপ নির্ভরশীল, সেই কেন্দ্রগুলিকে ১৬ মার্চ থেকে পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্যাস ভিত্তিক কেন্দ্রগুলিকেও তৈরি থাকতে বলা হচ্ছে। জলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকেও। মার্চের শেষে নতুন কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জোগান শুরু হবে।