কলকাতা: ধর্না মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়লেন উত্তরবঙ্গের ন্যাশনাল স্কিলস কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক বা এনএসকিউএফ ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। দীর্ঘ সময় ধরেই তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন নিয়োগ ইস্যুতে। সেই অবস্থান মঞ্চেই এদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন একজন। অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য উদ্যোগ নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় কর্মীকে।
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর মউ স্বাক্ষর দোরগোড়ায়, শহরে শাখা প্রায় নিশ্চিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের
জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার থেকে চৈতালি সরকার এই অবস্থান মঞ্চে এসেছিলেন। পরে তিনিই অসুস্থ হয়ে পড়েন। দাবি, প্রথমে প্রশাসন থেকে কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি, পরবর্তীতে প্রশাসন থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয় এবং চৈতালীকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চৈতালি আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে রিটেল বিভাগের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এনএসকিউএফ-এর মূল অভিযোগ, যাঁরা বৃত্তিমূলক শিক্ষক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন তাঁরাও মাসের বেতন মাসে পাচ্ছেন না, এদিকে সামাজিক সুরক্ষা নেই, যখন তখন ছাঁটাই করে দেওয়ার হুমকি মেলে।
আরও পড়ুন- কোথায় কেষ্ট-কন্যা? বোলপুর ছেড়েছেন, পৌঁছলেন না দিল্লি, ইমেল পাঠিয়ে অন্তরালে সুকন্যা
খোদ চৈতালি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে উত্তরের আশায় উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে এসে কলকাতার অবস্থান মঞ্চে এসেছিলেন তিনি, কিন্তু কোনও সুরাহা মিলছে না। এইভাবে পরিবার ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় থাকতে আর ভালো লাগছে না, শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বারংবার। তাঁর কথায়, তারা সবাই যোগ্য, তাই অবিলম্বে যেন মুখ্যমন্ত্রী তাদের বকেয়া বেতন সহ বিদ্যালয়ে পুনর্বহাল ও সকলের ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি সুনিশ্চিত করুন, এমনই দাবি তাঁর। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবার সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ ভৌমিক বলেন, “১০ বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। স্থায়ী বিষয়ে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করে দুর্নীতি হচ্ছে সব জেনেও মুখ্যমন্ত্রী চুপ করে আছেন। আমাদের সমস্যার সমাধান চাই অবিলম্বে।”
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”শান্তনু ঘনিষ্ঠের ফ্ল্যাটে মিলল TET-এর ওএমআর শিট! OMR sheets found in Ayan Sil’s flat” width=”835″>
বিষয় হল, বিভিন্ন বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য “ভোকেশনালাইজেশন অফ স্কুল এডুকেশনের” বিভিন্ন বৃত্তিমূলক বিষয়গুলি (আইটি, আইটিইএস, রিটেল, হেল্থ কেয়ার, অটোমোটিভ, সিকিউরিটি, প্লাম্বিং ইত্যাদি) ২০১৩ সালে শিক্ষাদান শুরু হয় রাজ্যে। প্রথম পর্যায়ে ৯৩ টি বিদ্যালয়ে এই বৃত্তিমূলক বিষয়গুলি শুরু হলেও বর্তমানে ৭২৬ টি বিদ্যালয়ে এই বিষয়গুলি চলছে। স্থায়ী বিষয় হওয়া স্বত্বেও এই বিষয়গুলিতে রাজ্য সরকার অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন প্রাইভেট এজেন্সী দ্বারা শিক্ষক ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের নিয়োগ করে। শিক্ষকরা দীর্ঘদিন অভিযোগ করছেন এই প্রাইভেট এজেন্সীগুলি ব্যবসার স্বার্থে ল্যাব পরিকাঠামো থেকে শিক্ষক নিয়োগ সবেতেই দুর্নীতি করে চলেছেন। শিক্ষকদের বেতন অনিয়মিত থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক কিছুই মিলছে না। এই সমস্ত বিষয়গুলি শিক্ষা দফতর ও কারিগরি দফতরে অভিযোগ জানিয়ে কোনও সুরাহা হয়নি। গত বছরের অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে কোনও রকম কারণ ছাড়াই ২১৮ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের ছাঁটাই করা হয়। সেই প্রেক্ষিতেই উত্তরবঙ্গ থেকে দফায় দফায় ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, শিক্ষক ও শিক্ষিকারা এসে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন- ১০০ কোটির চাকরি বিক্রি করেছেন অয়ন! বিপুল OMR সিট উদ্ধারে দাবি ইডির
গোটা বিষয় নিয়ে দাবি, হাতে কলমে শিক্ষার গুরুত্ব হারাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা এবং তারা শিক্ষাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর দীর্ঘ ১৭ মাস ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের বকেয়া বেতন ও বিদ্যালয়ে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চলছে। ২০১৮ সালে লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে পাশ করা প্রার্থীদের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ হয় কিন্তু তারপর ২০২১ সালে হঠাৎ করে চাকরি চলে যাওয়ায় স্বভাবতই পরিবার নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টরা।