এই দেশগুলিতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক, নিয়ম লঙ্ঘনে মেলে কড়া শাস্তি

এই দেশগুলিতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক, নিয়ম লঙ্ঘনে মেলে কড়া শাস্তি

d4e00ee3654b9af99ac1d5be099c3051

কলকাতা:  অগ্নিপথ-এর আগুনে জ্বলছে গোটা দেশ। অবসর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে কাজ করতে চাওয়া যুবকরা কেন্দ্রের এই চুক্তি ভিত্তিক প্রকল্পের বিরোধিতায় সোচ্চার।  রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সরব হয়েছে হাজারো যুবক। তবে আমাদের দেশে এখনও স্বেচ্ছায় যুবক-যুবতীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু, এমনও কিছু দেশ আছে যেখানে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। ইচ্ছার বিরুদ্ধেও কোনও একজনকে সেনায় যোগ দিতে হতে পারে। এমনকী বন্দুক হাতে যুদ্ধে যেতেও বাধ্য করা হতে পারে তাঁকে। এই সকল দেশগুলিতে হাজার হাজার যুবক-যুবতীকে একপ্রকার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ঠেলে দেওয়া হয় সেনার কাজে। 

আরও পড়ুন- ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগে রয়েছে গুচ্ছ শর্ত, কী কী সুবিধা পাবেন এই সেনারা

এই সকল দেশগুলির মধ্যে প্রথমেই বলতে হয়, উত্তর কোরিয়ার কথা। এ দেশে এক বিশেষ সামরিক নীতি রয়েছে। যার নাম ‘সোঙ্গুন’। এই নীতি অনুযায়ী, দেশের সকল সম্পদের উপর সেনাবাহিনীর অগ্রাধিকার। আর কিমের দেশে সম্পদ বলে পরিগণিত হয় সে দেশের বাসিন্দারাও। মূলত ১৭-১৮ বছর বয়সি স্নাতকদের সেনাদলে যোগদান করানো হয়। তবে মহিলারা স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীতে যোগদান করতেন। কিন্তু, ২০১৫-র পর থেকে মহিলাদেরও সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেন কিম জন উং। 

২০০৩ সালে নিয়ম বদল করে উত্তর কোরিয়ায় পুরুষদের কমপক্ষে ১০ বছর এবং মহিলাদের কমপক্ষে সাত বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে পুরুষদের জন্য ১৩ বছর এবং মহিলাদের জন্য ১০ বছর সেনায় থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। 

উত্তর কোরিয়ার মতো দক্ষিণ কোরিয়াতেও পুরুষদের সেনায় যোগদান বাধ্যতামূলক। পুরুষদের ২১ মাস সেনাবাহিনীতে বা ২৩ মাস নৌবাহিনীতে বা ২৪ মাস বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকতেই হবে। তবে কেউ চাইলে বিকল্প হিসেবে পুলিশ বা দমকলেও যোগ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্য একমাত্র সফল ক্রীড়াবিদরাই অব্যাহতি পেয়ে থাকেন৷ 

রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার নিয়মকানুনও বেশ কঠিন। সদ্য সেনাদলে যোগ দেওয়া সদস্যদের হামেশাই উচ্চপদস্থ কর্তাদের নির্যাতন সহ্য করতে হয়৷ যা তাঁদের ভাষায় ‘হ্যাজিং’ নামে পরিচিত। এমনকী অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধের সময় অপ্রশিক্ষিত সৈন্যদেরও তারা ব্যবহার করে বলে রাশিয়ার দুর্নাম রয়েছে। ইউক্রেন এবং চেচনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সংঘাত এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সে দেশের নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সি পুরুষদের ১২ মাসের জন্য সেনায় যোগ করতেই হবে। এই নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানা এমনকী কারাদণ্ডও হতে পারে।

ব্রাজিলের সংবিধান দেশের সমস্ত পুরুষদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া আবশ্যিক করেছে। সর্বনিম্ন ১২ মাসের জন্য ব্রাজিলের প্রত্যেক পুরুষকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকতেই হয়৷ তবে চাইলে আট বছর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় সেনার সঙ্গে যুক্ত থাকা যায়। ১৮ পেরোলেই সে দেশে যুবকদের সেনায় ভর্তি করানো হয়। কেউ বাহিনীতে যোগ দিতে না চাইলে তাঁর ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ারও আইন রয়েছে৷ তবে এই নিয়মের বাইরে রাখা হয়েছে মহিলাদের৷ 

একই রকম আইন রয়েছে ইজরায়েলেও৷ ১৯৪৯ সালের নিরাপত্তা পরিষেবা আইন অনুযায়ী আরবের ইজরায়েলিরা ছাড়া ১৮ বছরের বাকি সব ইজরায়েলিদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। পুরুষদের কমপক্ষে ২ বছর ৮ মাস এবং মহিলাদের কমপক্ষে ২ বছর সেনায় যুক্ত থাকার নিয়ম রয়েছে৷ তবে আরবের ইজরায়েলিদের পাশাপাশি বিবাহিত এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থদের সেনায় যোগদান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

আবার ইরানের সংবিধান বলছে, ১৮ বছর পেরোলেই যুবকদের দেড় থেকে দু’বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে। তবে মহিলাদের জন্য সেনার যোগ দেওয়ার বিষয়টি স্বেচ্ছামূলকই রাখা হয়েছে৷ শারীরিকভাবে অসুস্থদেরও এই নিয়মের বেড়াজাল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও ১৮ বছরের কোনও যুবকের বাবার বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে তিনিও নিয়মের ছাড়া পাবেন৷ 

চলতি বছরের গোড়ায় ইরান সরকার একটি নয়া প্রস্তাব এনেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে ৩৫ বছরের বেশি বয়সি পুরুষরা সেনায় যোগের ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক হইচই হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। 

কিউবাতেও পুরুষদের সেনায় যোগদান বাধ্যতামূলক৷ ১৭ থেকে ২৮ বছর বয়সি পুরুষদের দু’বছর দেশের সামরিক বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ ১৬ বছর হলেই সেনাদলে নাম নথিভুক্ত করে নিতে হয়৷ দু’বছর কাজ করার পর তাঁরা সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে গেলেও তাঁদের সেনার অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ৪৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত দেশের স্বার্থে তাঁরা ইচ্ছামতো আবার সেনায় যোগ দিতে পারেন। মহিলারা স্বেচ্ছায় দু’বছরের জন্য সেনাদলে যোগ দিতে পারেন। মহিলাদের সেনায় যোগদান বাধ্যতামূলক নয়৷ 

সুইজারল্যান্ডেও পুরুষদের নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। ২০ বছরের পর থেকেই সে দেশে পুরুষরা ২ বছরের সেনায় যোগ দেন৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টা স্বেচ্ছার৷ যদিও পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাদলে যোগ দেওয়ার এই নিয়ম পাল্টানোর জন্য ২০১৩ সালে  গণভোট হয়। কিন্তু সুইৎজারল্যান্ডের ৭৩ শতাংশ মানুষই পুরুষদের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আবশ্যিক ভাবে যোগ দেওয়ার পক্ষে ভোট দেন। 

তুরস্কেও ২০ থেকে ৪১ বছর বয়সি পুরুষদের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদান করাটা বাধ্যতামূলক। তবে ২০১৯ সালে সে দেশের আইনসভায় একটি নয়া আইন পাশ করানো হয়৷ তাতে সেনাবাহিনীতে পরিষেবার সময়সীমা ১২ মাস থেকে কমিয়ে ছ’মাস করে দেওয়া হয়। তবে কেউ চাইলে এর পরেও নিজের ইচ্ছায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকতেই পারেন। অন্যদিকে, এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণের পর কেউ চাইলে পাঁচ হাজার ডলারের বিনিময়ে বাকি পাঁচ মাস সেনাবাহিনীতে কাজ করা এড়াতেও পারেন। উচ্চশিক্ষার জন্য বা প্রবাসে থাকা তুর্কিরা অর্থ দিয়ে সেনায় নিয়োগ এড়াতে পারেন৷

এই তালিকায় রয়েছে সুইডেনও৷  ২০১০ সালে সে দেশে পুরুষদের আবশ্যিক ভাবে সেনাদলে যোগ দেওয়ার নিয়ম বাতিল করা হয়েছিল৷ কিন্তু, ২০১৭ সালে তা পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়। 

এরই মধ্যে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ এরিট্রিয়া দেশের পুরুষদের সেনায় নিয়োগের ক্ষেত্রে যে নিয়ম জারি করেছে, তা বহুল চর্চিত৷  মানবাধিকার কমিশনের মতে, এই দেশের অনেক পুরুষকেই তাঁদের সারা জীবন অনিচ্ছা সত্ত্বেও সামরিক বাহিনীতে কাটাতে হয়৷ ইথিয়োপিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চলার সময় ২০০৩ সালে সে দেশের সরকার নিয়ম জারি করে,  স্কুলশিক্ষা শেষ করার আগেই ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে৷ 

সিঙ্গাপুরেও পুরুষদের সেনায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক। ১৭ থেকে ৩০ বছর বছয় বয়সী ছেলেদের, কমপক্ষে দু’বছরের জন্য জাতীয় বাহিনীতে পরিষেবা দিতেই হয়। তবে সেনায় কাজ শেষ করার পর তাঁদের প্রচুর সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়৷ আর সেনায় যোগ না দিলেই বাতিল হয়ে যায় নাগরিকত্ব৷