মস্কো: বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের দাপটের মাঝে কিঞ্চিৎ একটা স্বস্তির আভাস মিলেছিল। মানুষ অপেক্ষা করছিল প্যানডেমিক শেষ হওয়ার। কিন্তু এরই মাঝে আচমকা যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহ তৈরি হয়ে গেল! সৌজন্যে রাশিয়া এবং ইউক্রেন। এখন আপাতত দুই দেশ সংঘর্ষে লিপ্ত। ইউক্রেন আক্রমণ করেছে রাশিয়া এবং অন্যান্য সকল দেশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে যাতে কেউ তাদের মাঝে না আসে। এমতাবস্থায় বিশ্ব যেন দুই ভাগে বিভক্ত। কোনও কোনও দেশ যেমন চিন, পাকিস্তান সরাসরি রাশিয়াকে সমর্থন করছে, আবার ভারত সহ অনেক আপাতত নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমেরিকা আবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেও এখনও পর্যন্ত সেই অনুযায়ী কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এদিকে আবার ইউক্রেনে ৫০ জনের মৃত্যুর খবর আসছে। গোটা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এখন একটাই বড় প্রশ্ন, কেন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করল? কী কারণ?
আরও পড়ুন- যুদ্ধের ক্ষত কি কেড়ে নেবে ইউক্রেনের এই সকল স্থানগুলির সৌন্দর্য্য
ইউক্রেনের দুই এলাকা, দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত। এই দুই এলাকাকে একত্রে ‘ডনবাস’ বলা হয়। সেখানে এখনও ইউক্রেন সেনার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু গতকাল আচমকা এই দুই এলাকাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু সেটা তিনি কী করে করতে পারেন? বিষয় হল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেদের মুক্ত বলে ঘোষণা করেছিল ‘ডনবাস’। দনেৎস্কের এক প্রাক্তন রাজনৈতিক নেতা আবার এখন রাশিয়ার সংসদের সদস্য। তিনি দাবি করেছেন, রাশিয়া যদি ডনবাসকে ইউক্রেন সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত এবং পৃথক অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় তবে ডনবাসবাসীরা ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হতে রাশিয়ার পাশে দাঁড়াবে। অন্যদিকে জানা যায়, এই এলাকার যে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তারা রাশিয়ান অর্থ এবং নানারকম সুযোগ সুবিধা নিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। এমনকি ডনবাসের বাসিন্দাদের কোভিড টিকাকরণ এবং প্রায় আট লক্ষ পাসপোর্টের ব্যবস্থাও করেছে পুতিন সরকার। তাই এখন এই দুই এলাকাকে স্বাধীন ঘোষণা করে সেনা ঢুকিয়ে দেওয়া মানে রাশিয়া প্রকাশ্যে যুদ্ধের বার্তাই দিল। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হবে, ‘বন্ধু’ হিসেবে ডনবাসের পাশে তারা।
এখানেও একটি বড় বিষয় রয়ে যায়, তা হল মিনস্ক শান্তি চুক্তি। ২০১৪ সালে যখন ডনবাস নিজেদের মুক্ত বলে ঘোষণা করেছিল তখন এই চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুসারে, ইউক্রেনের অধীনে থেকেও দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক এলাকা দুটি সম্পূর্ণ ‘স্বাধীনতা’ উপভোগ করবে। রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই তাতে বাধা দিতে পারবে না। তবে এতকাল কোনও দেশই সেই চুক্তি মানেনি। আর এখন রাশিয়া যে ঘোষণা করে দিয়েছে তা প্রত্যক্ষভাবে এই চুক্তি লঙ্ঘন করা। এখন যদি এই চুক্তি ভাঙে রাশিয়া তবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়বে তারা। পাশাপাশি দুটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হতে পারে তাদের, যা অবশ্যই বিরাট ব্যয়বহুল ব্যাপার। অন্যদিকে যদি ইউক্রেন নেটোয় অংশ নেয়, তা হলে এই পুরো এলাকায় রাশিয়ার ক্ষমতা খর্ব হবে। রাশিয়া দাবি করছিল যে, এই অঞ্চলে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে আমেরিকা-সহ নেটো গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলি। সেই নিয়েও বিতর্ক আছে। তাহলে এত বড় ঝুঁকি কেন নিচ্ছে রাশিয়া? আসলে ইউক্রেনের ওই দুটি অঞ্চল হাতে এসে গেলে রাশিয়া পাবে আরও একটি বন্দর। দনেৎস্কের ওই বন্দর ব্যবহার করলে বাণিজ্যের বড় সমস্যার সমাধান যেমন হবে রাশিয়ার, তেমনই বাঁচবে অনেক অর্থ। অর্থাৎ, অর্থনৈতিকভাবে বিরাট উন্নতি করতে পারবে পুতিন সরকার।