Who are the Taliban? তালিবান কারা? কী ভাবে গড়িয়ে উঠল জঙ্গি সংগঠন তালিবান?

Who are the Taliban? তালিবান কারা? কী ভাবে গড়িয়ে উঠল জঙ্গি সংগঠন তালিবান?

কাবুল: রক্তক্ষয়, সন্ত্রাস ও প্রাণের বিনিময়ে আফগান রাজধানী কাবুলে জাঁকিয়ে বসেছে তালিবান। ক্ষমতাবলে সেদেশের শাসনভার ছিনিয়ে নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী। তারপর থেকেই আতঙ্কের পুরনো স্মৃতি ফিরে এসেছে কাবুলিওয়ালার দেশে। বিশ্ব ত্রাস সৃষ্টিকারী এই তালিবান আসলে কারা? কীভাবেই বা এদের উত্থান? জানতে হলে পৌঁছে যেতে হবে আফগানিস্তানের সোভিয়েত শাসনের আমলে।

১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ জিয়া উল হক ভয় পেলেন, পাকিস্তানের বালোচিস্তানে না ঢুকে পড়ে লালফৌজ! তখন তিনি পাকিস্তান সেনাকর্তা জেনারেল আখতার আবদুল রহমানকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমর্থন আদায়ে সৌদি আরব পাঠান। সৌদি এবং পাকিস্তান একসঙ্গে গেমপ্ল্যান তৈরি করে। যোগ দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং সৌদি আরবের জেনারেল ইন্টালিজেন্স ডিরেক্টরেট যৌথভাবে অর্থ আর পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর পাঠানো অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণে তৈরি হয় আফগান মুজাহিদিন বাহিনী। সোভিয়েতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই এই মৌলবাদী জঙ্গি দল তৈরি হয়েছিল।

 

আইএসআইয়ের ট্রেনিংয়ে কিছুদিনের মধ্যে দলটি দক্ষ হয়ে ওঠে। এই দলেরই সদস্য ছিলেন মহম্মদ ওমর। পরবর্তীতে তিনিই তালিবান আন্দোলন গড়ে তোলেন। আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সেনা ফিরে যাওয়ার পরে ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে উত্তর পাকিস্তানে মাথাচাড়া দেয় তালিবানরা। পাস্তু ভাষায় তালিবানের মানে হল, সেই ছাত্র, যারা কট্টর ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত। ১৯৯৪ সালে, আফগানিস্তানের পূর্ব ও দক্ষিণের ইসলামিক স্কুলের ছাত্রদের নিয়েই এই রাষ্ট্রবিরোধী দল তৈরি করেন মহম্মদ ওমর। একবছরের মধ্যে ওমরের নেতৃত্বে তালিবানরা দক্ষিণ ও পশ্চিম আফগানিস্তান দখল করে নেয়। এরপর দখল করে নেয় কাবুলও। শুরু হয় তালিবানরাজ।

আফগানিস্তানের মাটি থেকে বিদেশি শক্তিকে উচ্ছেদ করে দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য, বলে বার বার দাবি করেছে তালিবান। সেই সঙ্গে তাঁদের নিজস্ব কট্টর শরিয়তি আইন লাগু করাও অন্যতম উদ্দেশ্য জঙ্গিগোষ্ঠীর। শরিয়তি আইন অনুযায়ী- খুন বা ব্যভিচারের মতো অপরাধে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড। চুরির সাজা অঙ্গচ্ছেদ! পুরুষদের দাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক, মেয়েদের জন্য বোরখা বাধ্যতামূলক। ১০ বা তার বেশি বয়সি মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। পুরুষ আত্মীয় ছাড়া মহিলাদের একা বাইরে বেরনো বন্ধ। হিল জুতো পড়ায় নিষেধাজ্ঞা। টেলিভিশন, গান, সিনেমা— সব কিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

অনুশাসন না মানলেই হয় চাবুক, না হলে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত! বাড়ি থেকে মেয়েদের জোর করে বিয়ে করার জন্য তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে তালিবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানের এই জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নষ্টের অভিযোগ রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে নির্বিচারে গণহত্যার ঘটনাও ঘটিয়েছে তাঁরা।  ২০০১ সালে আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলে বিখ্যাত বামিয়ান বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করে দেয় তালিবানরা। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় ওঠে। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর, পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়ায় মালালা ইউসুফজাইয়ের উপর হামলা চালায় তালিবানিরা। মৌলবাদী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কলম ধরার শাস্তি পেতে হয় বাঙালী সাহিত্যিক সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আফগানিস্তানের পাক্তিকা প্রদেশে অপহরণ করে তাঁকে খুন করে তালিবান। ২০১৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের ৬ জঙ্গি, পেশাওয়ার শহরের সেনা স্কুলে হামলা চালায়। প্রাণ হারান ১৪৯ জন।

শুরুর দিকে আফগানিস্তানের উপর রাশিয়ার প্রভাব শেষ করার জন্য তালিবানদের উত্থানের পিছনে মার্কিন সমর্থন ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু 9/11 হামলার পর ওসামা বিন লাদেন এবং তাঁর সঙ্গীদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তালিবানদের বিরুদ্ধে। সেই সময় নিজেদের ভুল বুঝতে পারে আমেরিকা। তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, আফগানিস্তানে গণতন্ত্র স্থাপনের চেষ্টায় নামে। মার্কিনী নিরাপত্তার আশ্বাসে ২০ বছরের সাময়িক স্বস্তির পর, ফের অন্ধকার যুগ ফিরে এসেছে আফগানিস্তানে। শুরু হয়েছে স্বৈরাচারী শাসন। পুরনো অভিজ্ঞতার কথা মনে করে তাই, মেরুদণ্ড দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে নাগরিকদের, মৃত্যুর পরোয়ানাটার জন্যই যেন অপেক্ষা…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *