কলকাতা: ভয়ঙ্কর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি তুরস্ক৷ সোমবার ভোরে কেঁপে ওঠে সে দেশের মাটি৷ কম্পন অনুভূত হয় সিরিয়াতেও৷ রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭.৮৷ এমনিতেও তুরস্ক ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ৷ ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে, পাঁচটি বড় বড় ভূমিকম্পের সাক্ষী ছিল সে দেশের মানুষ৷ উনিশ শতকে তুরস্কে ৭৬টি ভূমিকম্প হয়েছে৷ তাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৯০ হাজার মানুষ৷ এর বেশিরভাগটাই হয়েছে ১৯৩৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে৷ শুধুমাত্র ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পেই মৃত্যু হয়েছিল ১৭ হাজার মানুষের৷ কিন্তু ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায় কী? এর পূর্বাভাস কি দেওয়া সম্ভব?
আরও পড়ুন- তুরস্ক যেন ধ্বংসস্তূপ! কেন এত ভয়াবহ ভূমিকম্প হল এখানে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোন কোন জায়গা ভূমিকম্প প্রবণ তা আগে থেকে বলা সম্ভাবনা হলেও, কখন ভূমিকম্প হবে তা বলা সম্ভব নয়৷ লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ভূমিকম্পবিদ ড.স্টিফেন হিকসের কথায়, ‘‘দুঃখজনক হলেও ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব নয়৷ তবে আমরা যেটা করতে পারি তা হল ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। ক্যালিফোর্নিয়া এবং জাপানে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি কার্যকর রয়েছে বলেও জানান তিনি৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভূমিকম্প থেকে নিরাপদে থাকতে আপনি কী করতে পারেন এবং কোনটা করা উচিত নয়-
• ভূমিকম্প কখন আঘাত হানবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়, তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন- তৈরি থাকুন। ভূমিকম্প ঘটলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে আপনাকে আগে থেকেই একটা পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।
• “আপনি যদি ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে বসবাস করেন, তাহলে আপনার বাড়িতে একটি জরুরি প্যাক সব সময়ের জন্য তৈরি রাখা ভালো,” – তেমনটাই মত ড. হিকসের। এই প্যাকে থাকবে অতিরিক্ত খাবার, জল, একটি টর্চ, প্রাথমিক চিকিৎসার একটি কিট এবং কিছু শুকনো খাবার।
• আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মতে, ওই কিটের মধ্যে কিছু নগদ অর্থ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত নথিপত্রের কপি এবং আপনার ওষুধের তালিকাও রেখে দিন।
• ভূকম্পনের সময় আপনি বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে নিয়ে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনও আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন।
• রান্না ঘরে থাকলে সবার আগে গ্যাস বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে আসুন।
• রাস্তায় থাকলে উঁচু বাড়ি, গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে কোনও খোলা জায়গায় আশ্রয় নিন।
• ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে গেলে বেশি নড়া চড়ার চেষ্টা করবেন না। বরং কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলা বালি শ্বাসনালিতে ঢুকতে না পারে।
• বহুতলের উপরে থাকলে ভূমিকম্পের সময় লিফট দিয়ে তাড়াহুড়ো করে নামার চেষ্টা করবেন না। কম্পন থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কম্পন থামলেই দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন৷
• বিল্ডিং কোড ব্যবহার করে বাড়ি নির্মাণ করুন৷
• ভূমিকম্পের সময় গাড়ির ভিতরে থাকলে ওভার ব্রিজ, ফ্লাইওভার, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই থাকুন।
• বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি তুলনামূলকভাবে পুরানো বাড়িতে থাকেন তাহলে সবচেয়ে ভাল হবে টেবিলের নিচে আশ্রয় নেওয়া।
• আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভের পরামর্শ হল, আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন৷ এতে আহত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ভূমিকম্পের সময় দৌড়ে বাইরে যাওয়া কিংবা অন্য ঘরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
• “ড্রপ, কভার এবং হোল্ড অন” অর্থাৎ বসে পড়ুন, কিছু একটার তলায় ঢুকে নিজেকে আড়া করুন৷ কম্পন না থামা পর্যন্ত সেভাবে থাকাটাই নিরাপদ থাকার মূলমন্ত্র৷ হাঁটু গেড়ে বসে পড়লে মাথার ওপর কোন কিছু পড়ে যাওয়া থেকে আপনি বেঁচে যেতে পারেন৷ প্রয়োজনে ঘরের ভেতরে আপনি সামান্য নড়াচড়া করতে পারবেন।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>