‘ভাষার ছুড়ি ছিঁড়ে ফেলবে কল্পনার পর্দা’, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখিকা অ্যানি

‘ভাষার ছুড়ি ছিঁড়ে ফেলবে কল্পনার পর্দা’, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখিকা অ্যানি

স্টকহোম: কলমের কারিকুরি।  এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখক অ্যানি এরনো। বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল কমিটি-র পক্ষ থেকে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়৷ নোবেল কমিটির তরফে বলা হয়, ‘অ্যানির মতে লেখালেখি হল একটি রাজনৈতিক কাজ। সমাজে যে অসাম্য রয়েছে, তা সকলের নজরে নিয়ে আসবে তাঁর লেখা৷’’ আরও বলা হয়েছে, ‘‘অ্যানি বলেছেন ভাষাকে ছুরির মতো ব্যবহার করেন তিনি, যা কল্পনার পর্দা ছিঁড়ে ফেলবে।’ সুইস অ্যাকাডেমি জানাচ্ছে, অত্যন্ত  সাহস এবং অন্যন্য ধৈর্যের সঙ্গে শিকড়ের সন্ধান, ব্যক্তিগত স্মৃতির সঙ্গে তাঁর মিলন-বিরহের সম্পর্ককে কলমের স্পর্শে তুলে আনার জন্যেই এই পুরস্কার। সহজ-সরল ভাষায় আপোসহীন, দৃঢ় লেখা অ্যানি এরনোকে অন্য সকলের থেকে আলাদা করে তুলেছে৷

১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল অ্যানির প্রথম আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস, ‘লেস আরমোইরেস ভিদেস’৷ প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নিজের নরম্যান জাতিসত্ত্বা নিয়ে কাজ শুরু করেন অ্যানি। তবে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষ পৌঁছন  চতুর্থ উপন্যাস লা প্যালেস-এর হাত ধরে। ১৯৮৩ সালে সেই উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে বাবার চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন লেখিকা। কীভাবে সমাজ তাঁর বাবাকে গড়ে তুলেছিল, সেই ছবিই অক্ষরের মোড়কে সাজিয়ে তোলেন। সাহিত্যজীবনের একেবারে শুরু থেকেই তিনি কথাসাহিত্য থেকে সরে এসেছিলেন৷ শুরু করেন আত্মজীবনীমূলক রচনায়। ঐতিহাসিক এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা একত্রিত করে লিখে চলেন একের পর এক আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস।

১৯৪০ সালে ফ্রান্সের নর্মান্ডিতে এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম অ্যানির। রুয়েঁ এবং বোর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য নিয়ে পড়াশনা করার পর  সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর লিখন মূলত আত্মজৈবনিক৷  প্রথম জীবনে কিছু আখ্যানধর্মী লেখা লিখলেও পরে স্মৃতিকথায় ভর দিয়েই সাহিত্য রচনা করেন। একটি মেয়ে বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে পৃথিবীটা বলে যায় তা বারবার তাঁর লেখায় ছাপ ফেলেছে। কখনও তাঁর লেখায় উঠে এসেছে নিজের গর্ভপাতের প্রসঙ্গ৷ কখনও আসে মাতৃবিয়োগ, অ্যালঝাইমার্স বা ক্যানসারের কথা।তাঁর লেখা ‘আ উওম্যান’স স্টোরি, আ ম্যান’স প্লেস’, ‘সিম্পল প্লেস’ বা ‘আই রিমেন ইন ডার্কনেস’ পাঠকের নজর কেড়েছে৷ ‘প্যাসন সিম্পল’ গ্রন্থে এক পূর্ব ইউরোপীয় পুরুষের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক উপস্থাপন করে। ২০০৮ সালে প্রকাশিত তাঁর স্মৃতকথা ‘দ্য ইয়ার্স’-কেই সমালোচকরা অ্যানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে চিহ্নিত করেছেন।