লন্ডন: করোনা অতিমারী বদলে দিয়েছে বহু মানুষের ভাগ্য৷ হাজারো মানুষ কাজ হারিয়ে পথে বসেছে৷ আবার কোভিডে একমাত্র রোজগেরে সদস্যকে হারিয়ে কোনও পরিবার হয়েছে দেউলিয়া৷ অথচ অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলছে, এই অতিমারীর মধ্যেই ধনকুবেররা তাঁদের ভাণ্ডারে যোগ করেছে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার৷ অক্সফ্যামের রিপোর্ট দেখে চক্ষু চড়কগাছ৷ রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিমারী পর্বে বেড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য৷ অতিমারী বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঠেলে দিয়েছে দারিদ্রের দিকে৷ অন্যদিকে, রীতিমতো ফুলে ফেঁপে উঠেছে ধনকুবেররা৷
আরও পড়ুন- পড়শি দেশে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত ২! আহত একাধিক
ফোর্বসের ডেটা নিয়ে অক্সফ্যামের তৈরি রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদ ২০২০ সালের মার্চ মাসে ৮.৬ ট্রিলিয়ন ডলার ছিল, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে তা ১৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে৷ যা গত ১৪ বছরে একটি বড় বৃদ্ধি। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ জন ধনকুবের তাঁদের যৌথ সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে তুলেছেন৷ তাঁদের সম্পত্তি দিনে ১.৩ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে৷
প্রসঙ্গত, এই রিপোর্টটি দাভোস ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগে প্রকাশিত হয়৷ অক্সফ্যামের মতে, অতিমারী চলাকালীন প্রতিটি সরকারের উচিত অতি-ধনীদ ব্যক্তিদের উপার্জিত লাভের উপর কর আরোপ করা৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, টিকাকরণ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত।
অক্সফ্যামের কার্যনির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচারের কথায়, ‘‘বিলিওনিয়ারদের একটি ভয়ঙ্কর মহামারী হয়েছে। অর্থনীতিকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি ফিনান্সিয়াল মার্কেটে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার দিয়েছে৷ এর বেশিরভাগই স্টক মার্কেটের আশীর্বাদে ধনকুবেরদের পকেটে ঢুকেছে৷’’ টেসলা (টিএসএলএ) এর সিইও এলন মাস্ক এবং অ্যামাজন-এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস সহ বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবেরের সম্মিলিত সম্পদ অতিমারী পর্বে দ্বিগুণ হয়েছে৷ যা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ৩.১ বিলিয়ন মানুষের চেয়ে ছয় গুণ বেশি৷
বুচার আরও বলেন, ‘‘এই অতিমারী পর্বে শুধুমাত্র আমাদের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোই আমাদের নিরাপত্তাহীন করে তোলেনি৷ তাঁরা সক্রিয়ভাবে নিজেদের লাভের জন্য এই সংকটকে কাজে লাগিয়েছে৷ যাঁরা ধনী তাঁরা আরও ধনী হয়েছে৷ গরিব আরও গরিব৷’’ বিশ্বব্যাংকের অনুমান, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ৯৭ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছিল এবং এখন তারা প্রতিদিন ২ ডলারেরও কম উপার্জন করছে৷ বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের এই সংখ্যা ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের এত বৃদ্ধি পেয়েছে৷
ভ্যাকিসন বৈষম্যও এই মুহূর্তে একটি অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ বিশ্বের ধনী দেশগুলি ভ্যাকসিন মজুত করছে৷ তাদের জনগণকে টিকা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ডোজ কিনে রাখছে৷ কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে তাঁরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে৷ এই সমস্যা দূর করতে ধনকুবেরদের সাহায্য করার আবেদন জানানো হয়েছে৷