জানেন, কত সম্পদ আছে আফগানিস্তানের মাটিতে? চমকে উঠবেন

জানেন, কত সম্পদ আছে আফগানিস্তানের মাটিতে? চমকে উঠবেন

 

কাবুল: অফুরন্ত খনিজ সম্পদের দেশ আফগানিস্তান। খনিজ সম্পদ বা প্রাকৃতিক সম্পদ একটি দেশের জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি শুধুমাত্র খনিজ সম্পদের উপর নির্ভর করে টিকে আছে। এই সম্পদকে পুঁজি করে অনেক দেশ চরম দরিদ্র থেকে ধনী বনে গিয়েছে।

কিন্তু, ধনী হওয়ার এই সূত্র সবার ক্ষেত্রে  খাটে না। পৃথিবীতে কিছু দেশ এমনও আছে, যারা নিজেদের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরও বিভিন্ন কারণে সেগুলো উত্তোলন করতে পারছে না। এমনই হতভাগ্য দেশ হল আফগানিস্তান। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। দারিদ্র, নিরাপত্তাহীনতা, অশিক্ষা, দুর্নীতি, জাতিগত সংঘাত ও যুদ্ধ আফগানিস্তানের অন্যতম সঙ্গী। অথচ, এই আফগানিস্তানেই রয়েছে খনিজ সম্পদের বিশাল আধার।

দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা হিন্দুকুশ পর্বতশ্রেণি ওই সম্পদের ভাণ্ডার। আর এই গুপ্তধনের টানেই বারবার আফগানিস্তানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে বিদেশী শক্তিগুলি। আটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন, তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান তো আছেই… কিন্তু, আফগানিস্তানের উশর প্রান্তরে কী এমন লুকিয়ে আছে? যা বারবার বিদেশী শক্তিকে টেনে আনে এখানে?

ভূতত্ত্ববিদদের মতে,  মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মিলনস্থল পার্বত্য এই দেশটিতে ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ রয়েছে। মাটির নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লোহা, তামা, সোনা সহ গুরুত্বপূর্ণ ধাতু। লিথিয়ামের মজুদ বিশ্বে আফগানিস্তানেই সবচেয়ে বেশি বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ৬ লক্ষ ৫২ হাজার বর্গকিলোমিটারের আফগানিস্তান জুড়ে, আনুমানিক ১৪০০-র অধিক বিভিন্ন খনিজ ক্ষেত্র রয়েছে। এই ‘বিপুল খনিজ’ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক চিত্র পুরোপুরি বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু, নিরাপত্তা, অবকাঠামোর অভাব, খরার মতো প্রাকৃতিক কারণের জেরে মূল্যবান খনিজ সম্পদকে সঠিক ঊপায়ে ব্যবহার করতে পারছে না এই দেশ।

এই কারনেই, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিশ্ব ব্যাংক তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বেসরকারি খাত বিকশিত না হওয়ায় আফগানিস্তানের অর্থনীতি এখনও বৈদেশিক সহায়তার উপরই নির্ভরশীল। এর অন্যতম কারণ  হল দুর্বল সরকার, সুশাসনের অভাব৷ এই কারনেই  দেশের খনিজ ‘সম্পদ’ না হয়ে ‘অভিশাপ’ হয়ে উঠেছে আফগানদের জীবনে। যা আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, বর্তমান অস্থির পরিস্থিতির জন্যও সমান দায়ি। খনিজের বিচারে কতটা ধনী দেশ আফগানিস্তান? জেনে নেওয়া যাক-

লিথিয়াম: লিথিয়ামের ‘সৌদি আরব’ বলা হয় আফগানিস্তানকে। দুষ্প্রাপ্য এই খনিজ ধাতু রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রনিক্স থেকে সামরিক যন্ত্রপাতি, সবকিছু তৈরিতেই ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম।

লৌহ আকরিক: আফগানিস্তানে ২.২ বিলিয়ন টনেরও বেশি লৌহ আকরিক রয়েছে। ইস্পাত তৈরির এই কাঁচামালের বর্তমান বাজার মূল্য ৩৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

সোনা: আনুমানিক ২,৭০০ কেজি সোনা রয়েছে এই দেশের মাটির নীচে, যার মূল্য ১৭ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।

অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস: এই দেশে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, ১৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের প্রাকৃতিক গ্যাস এবং আরও ৫০০ মিলিয়ন ব্যারেল প্রাকৃতিক তরল গ্যাস রয়েছে বলে মনে করা হয়।

খনিজের ভান্ডার: এছাড়াও ইউরেনিয়াম, বক্সাইট, কয়লা, সীসা, তামা, দস্তা সহ বিভিন্ন মুল্যবান পাথর মজুদ রয়েছে আফগানিস্তানের মাটির নিচে।  আফগানিস্তানের খনি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই দেশে প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তামা রয়েছে, যার মূল্য শত শত বিলিয়ন ডলারের সমান।

তাৎপর্যপূর্ণভাবেই, কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর পশ্চিমারা তালিবানের সাথে কাজ না করার হুমকি দিলেও চীন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান ইতোমধ্যেই এই জঙ্গি সংগঠনটির সাথে বাণিজ্য করার ইচ্ছা পোষণ করেছে।

এর মূল কারণ, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিল্প সামগ্রী প্রস্তুত করা হয় চীনে।  সেই অর্থে চীনই মূলত বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই অবস্থায় তালেবানরা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে পারে কিনা সেটাও দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + twenty =