সাও পাওলো: ৩৪ বছর রাজত্বের পর পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বাম সরকার৷ ক্ষমতা হারিয়েছে পড়শি ত্রিপুরাতেও৷ দেশের অন্যান্য রাজ্যেও প্রায় কোণঠাসা বামফ্রন্ট৷ তবে ব্রাজিল প্রমাণ করল, বামপন্থীরা ফিরে আসতে জানে৷
আরও পড়ুন- জলে পা ডোবাতেই বিকট হা করে ধেয়ে এল হাঙর! কী ভাবে রক্ষা পেলেন তরুণী? ভাইরাল ভিডিয়ো
গোটা লাতিন আমেরিকা জুড়ে বইছে বামপন্থী হাওয়া৷ কিউবা, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া আগেই ছিল৷ গত দু’ বছরে বামপন্থীদের মাটি শক্তি হয়েছে আর্জেন্টিনা, গায়ানা, পেরু এবং চিলিতেও৷ আর এবার ব্রাজিল৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসলেন সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা বামপন্থী প্রার্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা৷ ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে হারিয়ে প্রেসিডেন্টের কুর্সি দখল নিতে চলেছেন তিনি৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই দেশে শান্তি ও ঐক্য স্থাপনের বার্তা দিয়েছেন দা সিলভা৷ তুলে ধরেছেন আমাজনকে বাঁচিয়ে রাখার গুরুত্ব৷
৭৭ বছর বয়সী দা সিলভা তাঁর বিজয়ী ভাষণে বলেন, ‘‘আমি গোটা বিশ্বের মানুষকে বলতে চাই, ব্রাজিল ফিরে এসেছে৷’’ তাঁর এই জয়ে উচ্ছ্বসিত গোটা দেশ৷ রাজধানী সাও পাওলোর রাস্তায় মানুষের ঢল৷ হাজার হাজার মানুষ উল্লাসে মেতেছে৷ ম্যারি আলভেস সিলভা নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মীর কথায়, ‘‘আমি জিতে গিয়েছি৷ এটা আমার জয়৷ আমি জয়ের আনন্দে কাঁদছি৷’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাজনের জঙ্গল আর আদিবাসীদের জন্য লুলার জেতাটা খুব জরুরি ছিল৷’’
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেবেন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা৷ কিন্তু যে সময় বামপন্থীরা নতুন করে ব্রাজিলে ক্ষমতায় আসছে, সেই সময়টা খুবই কঠিন৷ এই সময় সে দেশের ৩ কোটিরও বেশি মানুষ অনাহারে ভুগছে৷ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করছে ১০ কোটি মানুষ৷ গত কয়েক বছরের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ৷ বলসোনারো যে সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বিশেষ করে আমাজন অরণ্য সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন, তাতে আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ব্রাজিল৷ ফলে লুলার সামনে এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ৷ সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ অ্যামাজনকে রক্ষা করা৷
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সাও পাওলোর সমাবেশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, শুধু ব্রাজিলের ভোটার নন, তিনি কাজ করবেন ২১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের জন্য৷ বিশেষ করে কাজ করবে আমাজন রক্ষায়৷ তাঁর কথায়, ‘‘যুদ্ধের আবহ কেউ চায় না৷ আমাকে জ্যান্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু আমি বেঁচে আছি৷ আপনাদের মধ্যেই আছি৷’’
৫০.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন লুলা৷ বলসোনারো পেয়েছেন ৪৯.১ শতাংশ ভোট৷ এর আগে ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন দা সিলভা৷ এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল৷ তবে ভোটে জিতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়েছেন৷ ফ্যাসিস্টদের মুখে একটা শোনা যায়, বামপন্থীরা যে জায়গা থেকে যায়, সেখানে আর ফিরে আসে না৷ কিন্তু, সে কথা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে লাতিন আমেরিকা ফিরেছে৷ এবার ইউরোপে ফেরার প্রস্তুতি৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>