কলকাতা: সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দ৷ যার ফলও মিলছে হাতে হাতে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিক রুষ্ট রূপের প্রভাবে ছারখার হয়েছে মানব জীবন৷ প্রকৃতি এটা বারেবারে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে গেলে তা কতটা ভয়ানক হতে পারে৷ প্রাকৃতির বিপর্যয়ে শুধু কোটি কোটি টাকার ক্ষতিই হয় না৷ দেখতে হয় মৃত্যু মিছিল৷ দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সাতটি ভয়ঙ্কর বিপর্যয়৷ যা মানব জীবনে বিনাশ ডেকে এনেছিল৷
আরও পড়ুন-৪০টি দেশের উপর দিয়ে উড়েছে চিনা ‘স্পাই বেলুন’! কী কী গোপন তথ্য হাতিয়েছে জানাল আমেরিকা
ওয়াটার স্পাউট- আমরা সকলেই টর্নেডোর সঙ্গে পরিচিত৷ কিন্তু ওয়াটার স্পাউট নামটি অনেকের কাছেই অজানা৷ বলে রাখা ভালো, এই ওয়াটার স্পাউট অনেকটা টর্নেডোর মতো৷ প্রবল গতিসম্পন্ন ঘূর্ণায়মান হাওয়া নদী বা সমুদ্রের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তা জলরাশিকে অকর্ষণ করতে থাকে৷ হাওয়া আর জলের এই মিশ্রনে তৈরি হয় ওয়াটার স্পাউট৷ এটি মূলত সমুদ্রের উপরেই তৈরি হয়৷ এটি কখনও কখনও সমুদ্রে ভাসমান জাহাজ বা নৌকার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে৷ কিন্তু এই ওয়াটার স্পাউট ভূখণ্ডে ঢুকেও তাণ্ডব চালিয়েছে৷ যার ফলও ছিল ভয়ঙ্কর৷
টাইফুন- টাইফুন আদতে একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়৷ এটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, এর চলার পথে আসা সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করে দেয়৷ এমনই এক ভয়ঙ্কর টাইফুন আছড়ে পড়েছিল ফিলিপিন্সে৷ দিনটা ছিল ২৬ অক্টোবর৷ সাল ২০২০৷ এই ঘূণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছিল গনি৷ ফিলিপিন্স সমগ্র বিশ্বে তৃতীয় এমন দেশ, যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়৷ তবে গনির তাণ্ডব ফিলিপিন্সকে ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করায়৷ এই ঘূর্ণিঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার৷ এখানেই শেষ নয়৷ হাওয়ার বেগ ঘণ্টায় ৩১০ কিলোমিটারে পৌঁছে গিয়েছিল৷ ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড় ফিলিপিন্সের পাশাপাশি চিন, তাইওয়ানেও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল৷ এর ভয়াবহতা আজও ভুলতে পারেনি সে দেশের মানুষ৷
টর্নেডো- টর্নেডোর ধ্বংসলীলা সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল৷ অতি দ্রুত আবর্তনশীল ক্ষুদ্র আকারের অথচ প্রলয়ঙ্কারী বজ্রঝড়। এটি চোঙ আকৃতির হয়ে থাকে এবং এই বজ্রঝড়ের মধ্যভাগের বায়ু অতিদ্রুত বেগে উপরে উঠতে থাকে। এই চোঙ যদি ভূমি স্পর্শ করলে ধ্বংসলীলা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। টর্নেডো দেড় কিলোমিটার চওড়া ও ৮০ কিলোমিটার লম্বা হতে পারে৷ এটা সাধারণত খোলা জায়গায় উৎপন্ন হয়৷ সাধারণত উত্তর গোলার্ধের কোনও স্থানীয় স্থল নিম্নচাপের দক্ষিণ-পূর্ব অংশেই টর্নেডোর উৎপত্তির হয়৷
১৯৭৭ সালে আমেরিকার মিয়ামি শহরে ভয়ঙ্কর এক টর্নোডো হানা দিয়েছিল৷ যা সমুদ্র থেকে তীব্র গতি ও শক্তিতে ভূপৃষ্ঠের দিকে অগ্রসর হতে থাকে৷ এটা আকারে একটাই বড় ছিল যে, যা দেখে সাধারণ মানুষের বুক কেঁপে ওঠে৷ তবে তা শহরে ঢুকতে পারেনি৷ কিন্তু, এর শক্তি সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়৷
ভূমিধস– অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলেই সাধারণত ভূমিধস হয়ে থাকে৷ বৃষ্টির জল জমার ফলে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে৷ তখনই মাটি ধসে পড়ে৷ সাধারণত পাহাড়ি এলাকাতেই এই ধরনের ভূমিধস হয়ে থাকে৷ ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর এমনই এক ভয়ঙ্কর ভূমিধসের সাক্ষী থাকে নরওয়ের মানুষ৷ নদীর তীরবর্তী ২৪ একর জমি ধীরে ধীরে জলের তলায় চলে যায়৷ নৌকার মতো গোটা এলাকা জলে ভেসে যায়৷ সেই ভূমিধসের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ তবে স্থানীয়দের কথায়, এত ভয়ঙ্কর ধস এর আগে তাঁরা কখনও দেখেননি৷
আগ্নেয়গিরি- আগ্নেয়গিরির কথা শুনলেই বুকের ভিতরটা ধুক করে ওঠে৷ গনগনে লাভা, কালো ছাই চোখে ভেসে উঠলেই সারা শরীরে শিহরিত হয়ে পড়ে৷ ১৮১৫ সালের ১০ এপ্রিল তাম্বোরায় এক ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত হয়৷ যার বিভৎসতা আজও ভুলতে পারেনি মানুষ৷ কারণ এটি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অগ্ন্যুৎপাত বলে মনে করা হয়৷ যেখানে ৫০ কিউবিক কিলোমিটার লাভ উদগীরণ হয়েছিল৷ ঘটনাস্থল থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা লাভার চাদরে ঢাকা পড়েছিল৷
সুনামি- সমুদ্রের ঢেউ মানুষের মন ভালো করে দেয়৷ কিন্তু সেই ঢেউই যখন সুনামির আকার নেয়, তখন আতঙ্কের সৃষ্টি করে৷ ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া ভয়াল ভূমিকম্প হয়৷ রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৯.১৷ এর প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশিতে বিশাল জলোচ্ছাস সৃষ্টি হয়৷ বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে সমুদ্রের পাড়ে৷ যার উচ্চতা ছিল ৫০ থেকে ১০০ ফুট৷ এর প্রভাব পড়েছিল ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলঙ্কার উপরেও৷ কোনও কিছু বোঝার আগেই উপকূলবর্তী শহরগুলিকে গ্রাস করে নিয়েছিল সমুদ্র৷ সুনামির জেরে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ৷
ভূমিকম্প- যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে ভয়ঙ্কর হল ভূমিকম্প৷ সম্প্রতি ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে তুরস্ক ও সিরিয়া৷ সেখানে এখনও পর্যন্ত ২১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ তেমনই ১৯৬০ সালের ২২ মে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় চিলি৷ প্রবল বেগে নড়ে ওঠে সে দেশের মাটি৷ রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৯.৬৷ মৃত্যু হয় ১৬০০ মানুষের৷ ২০ লক্ষ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>