একনায়কতন্ত্র নয়, মহামারী রুখতে দরকার সংহতি, সহানুভূতি: ইতিহাসবিদ ইউভাল হারারি

একনায়কতন্ত্র নয়, মহামারী রুখতে দরকার সংহতি, সহানুভূতি: ইতিহাসবিদ ইউভাল হারারি

ওয়াশিংটন: করোনার জেরে গোটা বিশ্বে যে মহামারী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের কথা বারবার জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। বাস্তবে সেই নিয়ম অমান্যেরও অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কেউ কেউ তো এমনও মনে করেন যে, এই অবস্থায় সরকারের কড়া পদক্ষেপ করা উচিত। এদিকে জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে একনায়কতন্ত্র কার্যকরী পদক্ষেপ নয় বলেই মনে করেন বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবিদ তথা লেখক ইউভাল নোয়াহ হারারি। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে এমনই মন্তব্য করেছেন তিনি।

গোটা বিশ্ব করোনার আতঙ্কে রয়েছে। ভারতেও আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় বিচ্ছিন্নকরণের নীতি নিয়েছে সরকার। উঠে এসেছে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের প্রসঙ্গ। ইতিহাসবিদ হারারি বলেন গোটা বিশ্ব যেখানে জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন, সেখানে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে একনায়কতন্ত্রের চেয়েও বেশি কার্যকরী হল গণতন্ত্র।

তিনি বলেন, 'কেউ কেউ মনে করেন, একনায়কতন্ত্র যেহেতু দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাই এই পরিস্থিতিতে একনায়কতন্ত্রই হয়তো উপযুক্ত সমাধান। কিন্তু সমস্যা হল, একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী সেই নেতা যদি এই সঙ্কটের সময়ে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তিনি সেই ভুল স্বীকার করবেন না। বরং অন্যকে দোষারোপ করবেন। হয়তো সেই ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগও করবেন।' উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, 'চীনের শাসকদল এই সঙ্কটের প্রভাবশালী মোকাবিলা করেছে, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও নিউজিল্যান্ডও সঙ্কট মোকাবিলায় সফল হয়েছে, যদিও তারা গণতান্ত্রিক দেশ।' এছাড়াও এই সঙ্কটের সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সংহতির। মানুষ যদি একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, তাহলে তা অনেক বেশি কার্যকরী হবে এই জরুরি অবস্থায়।

ইতিহাসবিদ হারারির কথায়, অনেকেই মনে করেন, বিশ্বের সব দেশকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার মাধ্যমেই এরকম মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব। সীমান্তে দেয়াল তুলে, বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করেই যেন আটকে দেওয়া যাবে এই মহামারীকে। কিন্তু এভাবে দীর্ঘ সময় চললে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হবে। তাই মহামারী রুখতে পৃথকীকরণের চেয়ে বেশি কার্যকরী হল পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। তিনি বলেন, ' এই মুহূর্তে ভাইরাস সবচেয়ে বড় বিপদ নয়, বরং মানুষের মধ্যে থাকা বিদ্বেষ, একে অন্যকে দোষারোপ করা ইত্যাদি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক।' এই পরিস্থিতিতে আমাদের যা করতে হবে, সেই পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি একে অন্যের সহযোগিতা, একে অন্যের সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মত তথ্য আদান প্রদান করা, একসঙ্গে কাজ করা প্রভৃতির কথা বলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *